রাজীব রং : দেখতে দেখতে সমগ্র বিশ্বের একটির পর একটি দেশের সাথেই , বৃহৎ ভারতবর্ষের বিস্তারিত এলাকায় নতুন করে সংক্রমণের জাল বিস্তার করছে নভেল করোনা ভাইরাস অর্থাৎ COVID-19 । এই ভাইরাসের আগ্রসী ভয়ঙ্কর মৃত্যু ছোবল ইতিমধ্যেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য গুলিতে ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করেছে । আজ পর্যন্ত ৭২৭ জন ভারতীয় ও ৪৩ জন বিদেশী সংক্রমিত হয়েছে ভারতবর্ষে এবং ইতিপূর্বে ২০ জন নিরীহ মানুষের প্রান কেড়ে নিয়েছে এই করোনা ভাইরাসের কালছোবল । এত কিছুর মধ্যেও এই প্রবল বেগে ধেয়ে আসা অশনি সংকেত যুক্ত করোনা ভাইরাসের কবল থেকে পুনরায় সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে যারা তার সংখ্যা কম নয় , তবে তা হয়েছে শরীরের প্রতিষেধক ক্ষমতা ও পরীক্ষামূলক চিকিৎসার মাধ্যমে । এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি , ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সমগ্র পীঠস্থানটিকে টানা ২১ (একুশ ) দিন লক ডাউন ঘোষণা করেছে ।
এই একুশ দিন লগ ডাউন ঘোষণা নিয়ে নানা মুনির , বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন মহামূল্যবান মত উপস্থাপন করেছেন । অনেকই রাজনৈতিক , ভারতীয় বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক , উপমহাদেশীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুরবস্থা ও গুরুত্ব এবং বেশ জোরালো তাৎপর্যপূর্ণ অনিশ্চিত খাদ্য সুরক্ষার মতমতকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এই লগ ডাউন সিদ্ধান্তকে বানচাল করার চেষ্টা করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন । তবে এত কিছুর মধ্যেও কেন্দ্রীয় সরকার তাদের মতবাদে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি । অনান্য রাজ্য গুলির সাথে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কেন্দ্রর করোনা মোকাবিলায় যোগ্য সহযোগিতা করে চলেছে , যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে । এবং এই লক ডাউনে সমাজের সর্বস্তরের জনগণেকে সামিল হতে অনুরোধ করছে , অন্যথায় প্রশাসন দিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করে এক প্রকার বাধ্য করছেন । এখন কথা হল আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই লক ডাউনে অংশগ্রহণ করবো কেন ?
অংশ গ্রহণ করবো কেন ! এই বিষয়টি আলোচনা করতে হলে , করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে । ভাইরাস কি ? তার প্রকার ভেদ , মানব জীবনের উপর ভাইরাসের ভয়াবহ প্রকোপ এবং তার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা প্রয়োজন ।
ভাইরাস হল ক্ষুদ্র জৈব্যকনা । এর আকার সাধারণত 10nm - 300nm পর্যন্ত হয় । তবে কখনো কখনো এই আকার কম বা বেশিও হতে পারে । মতান্তরে মানুষ যখন একজোট হয়ে প্রকৃতির উপর অত্যাচার করতে শুরু করেছে , তখনই সৃষ্টি হয়েছে ভাইরাস নামক অতিক্ষুদ্র অনুবিক্ষন যন্ত্র ছাড়া সাধারণ চোখে অদৃশ্য , অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষতিকারক জৈব্ কনার বা ভাইরাসের । জীব সৃষ্টির ইতিহাসে প্রথম পর্যায়ে থেকেই ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার নতুন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও প্রকৃতি যখন নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে অতিবৃষ্টি , দূষণ বা অন্য কোন কারণে তখন নানা ধরনের ভাইরাসের সৃষ্টি হয় । এই ভাইরাস উদ্ভিদ , প্রানী , ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার জীবনে সক্রিয় ভাবে বেঁচে থাকে আর জল , বাতাস , মাটিতে পরিবেশ পরিস্থিতির তারতম্য অনুসারে নিস্ক্রিয় ভাবে বেঁচে থাকতে পারে । আর এই ভাইরাস জনিত কারণেই প্রানীর দেহে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হয় । আজ থেকে ১০০০ (হাজার) বছর ধরেই মানুষের শরীরে প্লেগ , হান্টা , কলেরা , নিপা , বসন্ত , নিউমোনিয়া , টাইফয়েড , ধনষ্টংকার , ম্যালেরিয়া , এডস , স্প্যানিস ফ্লু , করোনা নামক নানা ভাইরাস , বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ নিয়ে সহস্র রোগ ও মহামারী সৃষ্টি করে চলেছে । রেকর্ড অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীতে ছোট খাটো মহামারী ঘটলেও যে সকল উল্লেখযোগ্য মহামারী মানব সভ্যতাকে অনিশ্চিয়তার কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল সেগুলি হল একটু আলোকপাত করবো :
প্রথমত ।। ১৭২০ সালে , প্রথম প্লেগ রোগ মহামারী আকার ধারণ করে ছিল দক্ষিণ স্পেনের মারসাই শহরে কালো ইঁদুরের শরীর থেকে , তবে মতান্তর আছে এই মহামারী রোগও চীন থেকে ছড়িয়ে ছিল কারন এই প্লেগ তখন চীন দেশে অনেক বার ঘটেছে । সে যাই হোক ১৭২০ সালের প্লেগ মহামারীতে , সমগ্র ইউরোপের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর কবোলে মারা যায় ১ (এক) লক্ষ মানুষ , ভেঙে পড়ে ইউরোপীয় অর্থনীতি সমাজনীতির শক্ত মেরুদন্ড ।
দ্বিতীয়ত ।। ১৮২০ সালে , দরিদ্র ও জন ঘনবসতিপূর্ণ এশিয়া মহাদেশে জল বাহিত কলেরা মহামারীর ধারণ করলো । সাথে ইন্দোনেশিয়া , থাইল্যান্ড , ফিলিপিন্সে । এতে কয়েক লক্ষ নারী , পুরুষ , শিশু , সকল বয়সের মানুষ মারা যায় । এমনিতেই খাদ্য অভাব তার উপর উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্তা নেই , মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন নয় ফলে গ্রামের পর গ্রাম , শহরের পর শহর উজাড় হয়ে যায় । কেউ দেহ দাহ করতে রাজি হল না , যেখানে সেখানে দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে , কুকুর , শৃগাল , শকুনে ছিড়ে খাচ্ছে , চারিদিক দুর্গন্ধ ভরপুর হয়ে আছে । এই কলেরায় শুধু ভারতেই প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ।
তৃতীয়ত ।। ১৯২০ সালে ( ১৯১৮ জানুয়ারি থেকে ১৯২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ) , বাতাস বাহিত স্প্যানিস ফ্লু কলেরার একশো বছর পর পৃথিবীর বুকে মহামারী আকারে আবির্ভূত হয় । এই স্প্যানিস ফ্লু নাম H1N1 ভাইরাসে সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৫ (পাঁচ) কোটি মানুষের মৃত্যু হয় । তবে এটি স্প্যানিস ফ্লু নাম পরিচয় হলেও স্পেনে উৎপন্ন হয়েছে তা কিন্তু নয় , এর উৎস কোথায় তেমন ভাবে জানা যায়নি । এই মহামারীতে সমগ্র বিশ্বে কবলিত হয়েছিল এবং মহামারীর ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে যততত মানুষের দেহ মরা পিঁপড়ের মত পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল , সৎকার করার মানুষ থাকে নি । যেহেতু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ পর্যায়ে তাই বেশিরভাগ দেশে তাদের মৃত্যু সংখ্যা সঠিক ভাবে দেখায় নি । কারণ ততদিনে প্রচার হয়েছে জার্মান এই ভাইরাস অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে ।
চতুর্থত ।। এই ভাবে মানুষ মারা যাওয়ার পরও মানুষ শিক্ষা না নেওয়ায় , আধুনিক সভ্যতার বুকে ঠিক একশো বছর পর আবার ২০২০ তে মহামারী আকারে করোনা ভাইরাস আধুনিক মানব জাতিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে । ইতিপূর্বে বহির বিশ্বের উন্নত দেশে গুলির সাথে ( ১৯৯ একশো নিরানব্বই) চীন , আমেরিকা , ইরান , জাপান , কোরিয়া , ইতালি সহ সমগ্র ইউরোপ মহাদেশ মৃত্যুস্তুপে পরিনত হয়ে যাচ্ছে । যেখানে মানুষ শিক্ষিত , স্বাস্থ্য সচেতন , সুষ্ঠু সুন্দর পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা , অর্থনৈতিক ভাবে শক্ত মেরুদন্ড । সেখানেও এই করোনা ভাইরাস উল্লেখযোগ্য ভাবে থাবা বসিয়েছে , এখন মানুষ নীরবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হচ্ছে ।
এছাড়া প্রতিবছর প্রায় এডস কারণে ১লক্ষে মানুষ , নিউমোনিয়া ১.৫ লক্ষ মানুষ , টাইফয়েড ২.১ মানুষ, ম্যালেরিয়া ২লক্ষ মানুষ, নিপা ১লক্ষ জন মানুষ এই সব ভাইরাস জনিত রোগে মারা যায় ।
এতদিন পর্যন্ত ভাইরাস প্রকৃতিক উপায়ে উৎপন্ন হলেও , ১৮৪৩ সালে Adolf Mayer প্রথম তামাক গাছের মর্জা নিয়ে TMV ( Tobacco Mosaic Viras) কৃত্রিম উপায়ে ভাইরাস তৈরী করেন । বিজ্ঞানের উন্নতির দ্বারা নানা ধরনের ভাইরাস তৈরী করে , সেই ভাইরাসকে ভালো মন্দ কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে । এবং অনেকেই মনে করেন ১৯২০ সালের যে স্প্যানিস ফ্লু (H1N1) তে সমগ্র বিশ্বে কয়েক কোটি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে ছিল এবং প্রায় ৫ ( পাঁচ) কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল , তা ছিল জার্মানদের তৈরি ভাইরাস , তবে তার সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি ।
আজ বিশ্বে পুনরায় একটি কথার ঢেউ উঠেছে , যে সমাজতান্ত্রিক চীনের উহান প্রদেশের একটি ল্যাবে চীন সরকার অত্যন্ত সংক্রমিত এই করোনা ভাইরাস কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করছিল মারন অস্ত্রে ব্যবহার করতে । কিন্তু সেটি সংক্রমিতের পথ অবলম্বন করে কোন প্রকারে বাইরে বেরিয়ে এসে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং তা থেকেই আজকের এই বিপত্তি হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু , পৃথিবী পরিনত হচ্ছে মৃত্যু মিছিলে , মানুষ দেখছে মৃত্যুস্তুপ ।
তবে উল্লেখ করার বিষয় ১৯৮১ সালে মার্কিন লেখক তিনি তার THE EYES OF DARKNES নামক বইতে উল্লেখ করেছেন , করোনা ভাইরাস মারন জৈব্ অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার হবে ইতিমধ্যে তার মিশন শুরু হয়েছে এবং তাতে সংক্রমিত মানুষ ১০০ শতাংশ মৃত্যু বরন করবে কথাটি কাকতালীয় ভাবে হলেও বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণের চেষ্টা করা উচিত বলে মানব সভ্যতা আর্জি তুলছে ।
তবে এই করোনা ভাইরাস একটি অত্যন্ত সংক্রমিত ছোঁয়াচে ভাইরাস ও রোগ । যদি মানুষ সচেতন না হয় তাহলে মানব জাতি হুমকি মুখে পড়বে , কারন অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ১:৪ অনুপাতে চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । আর এক একটি দেশে মহামারী আকার ধারণ করছে, এই মহামারীর দানবীয় আগ্রাসী মুর্তির সম্মুখে সমগ্র মানব সভ্যতাকে অসহায় মনে হচ্ছে । এমতাবস্থায় করোনা ভাইরাস থাবা ফেলেছে ভারতবর্ষে । একজন আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে আর একজন মানুষের শরীরে এই ভাইরাসে অতি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে । আক্রান্ত মানুষের সর্দি , কাশি , হাঁচি , থুতু ও লালার মাধ্যমে সংক্রমিত ব্যক্তির শরীর থেকে বেরিয়ে আসে এবং হাতে , মুখে , নাকে লেগে থাকা । কোন অনুঘটক , বা তৃতীয় বস্তুর মাধ্যমে যেমন মোবাইল , টাকা , কোন আক্রান্ত ব্যক্তির কোন জিনিস ব্যবহার , আক্রান্ত ব্যক্তির ছোঁয়া পেলেই সেই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে পড়ে । এছাড়া একটি হাঁচির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ৩০০০ হাজার জৈবকনা করোনা ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারে এবং অতি সহজেই বাতাসে মিশে গিয়ে ১-২ মিটার পর্যন্ত কোন ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে ।
একজন ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশের পর , আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সাথে সাথে পরিবর্তন হয় না । প্রথম ১-৩ দিনের পর হাল্কা সর্দি , কাশি , জ্বর , গলাব্যাথা , চোখ মুখ লাল হয়ে যাওয়া এই সব উপসর্গ দেখা দিবে । ৪ দিন থেকে এই সব সর্দি ,কাশি ,জ্বর, গলাব্যথা এই গুলি বাড়ার সাথে যুক্ত হবে মাথা ঘোরা , ডাইরিয়া , মাত্রাতিরিক্ত জ্বর (১০৪ পর্যন্ত) , শ্বাসকষ্ট ও বুকব্যথা । তারপর খাঁচুনি দিয়ে ঘটতে পারে নির্মম পরিনতি অর্থাৎ মৃত্যু । পরিসংখ্যান অনুযায়ী আজ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩২২৩০ মানুষ তার মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১২৪৩৩১(২৩.৩৬%) মারা গিয়েছে ২৪০৮৯ (৪.৫৩%) জন মানুষ ।
।। পৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর গতি ছিল এই রকম ।।
১৫/০২/২০২০ = ১৬৬৯ জন
২৫ /০২/২০২০= ২৭৬৩ জন
০৬/০৩/২০২০ = ৩৮৯৮ জন
১৬/০৩/২০২০ = ৭১৬২ জন
২৬/০৩/২০২০ = ২১২৯৩ জন
২৭/০৩/২০২০ = ২৪০৮৯ জন
। আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে মৃত্যুর হার এই রকম ।
ইতালিতে -- ১০.০৯ %
যুক্তরাষ্ট্র --- ১.৫০%
স্পেনে ------০৭. ১৩ %
চীনে --------- ৪.০৪ %
রেকর্ড অনুযায়ী একদিনে সর্বোচ্চ সমগ্র পৃথিবীতে মারা গেছে ২৯৫৩ জন , আর ইতালিতে সর্বাধিক ৭১৩ জন , এবং স্পেনে সর্বাধিক ৭৫৮ জন , যুক্তরাষ্টে সর্বাধিক ২০০০ জন ।
তবে যেহেতু এই ভাইরাসের এখনো পর্যন্ত টিকা আবিষ্কার হয়নি , অথচ ছোঁয়াচে তাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে এবং ঘনঘন হাত মুখ ধুয়ে ও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসলে এই মারন রোগকে আটকে রাখা যায় তাই এই লগ ডাউন বা কারফিউর ব্যবস্থা । কারন যদি ভারতের মত জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আবাদ মেলামেশা উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা না হয় তাহলে সমগ্র ভারতবর্ষে এই মারন ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে , সাথে সাথেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু তখন কিছু করার থাকবে না ।
ইতিমধ্যেই ভারতে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৭৩৫ জন ভারতীয় ও ৪৩ জন বিদেশী সংক্রমিত হয়েছে এবং ২০ মারা গিয়েছে ।
।। ২৭/৩/২০ অনুয়ায়ী পরিসংখ্যান এই রকম ।।
রাজ্য --- সংক্রমিত --- মৃত --- পুনর্জীবন
১ অন্ধপ্রদেশ ১১ ---------১----------- ১
২ অরুনাচল ০------------০ -----------০
৩ আসাম ০ --------------০----------০
৪ উত্তর প্রদেশ ৪২----------০----------১১
৫ উত্তরাখণ্ড ৫ -------------০-----------০
৬ ওড়িষ্যা। ০২ ------------০-----------০
৭ কেরেলা ১৩৭ ------------০---------১১
৮ কর্নাটক ৫৫-----------২----------৩
৯ গুজরাট। ৪৩------------৩----------০
১০ চন্ডিগড়। ৭-----------০-----------০
১১ ছত্রিশগড় ৬ -------------১-----------০
১২ জন্মু কাশ্মীর ১৪-----------১----------১
১৩ ঝাড়খন্ড ০------------০----------০
১৪ তেলেঙ্গানা ৪৫----------০-----------১
১৫ তামিলনাড়ু ২৯-----------১----------১
১৬ দিল্লি ৩৬-----------১----------৬
১৭ পাঞ্জাব ৩৩-----------১---------- ০
১৮ পদুচেরি ১------------০-----------০
১৯ পশ্চিমবঙ্গ ১০----------১-----------০
২০ বিহার ৭-----------১------------০
২১ মধ্যপ্রদেশ ২০----------১-----------০
২২ মহারাষ্ট্র ১২৫--------৫------------১
২৩ রাজস্থান ৪০ -----------০-----------৩
২৪ লাদাখ ১৩-----------০-----------০
২৫ হরিয়ানা ৩২----------০-----------১১
২৬ হিমাচল ৩----------- ১ ------------০
২৭ মিজোরাম ১------------০-----------০
২৮ মনিপুর ১-------------০-----------০
২৯ গোয়া। ৩-------------০-----------০
________________________________________
মোট ৭৩৫ ----------- ২০ ---------
এমতাবস্থায় মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসবে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেড দিতে পারবে না কারন ভারতের জনসংখ্যা অনুপাতে প্রতি ১৬০০০ মানুষের জন্য একটি ডাক্তার আছে এবং প্রতি ১৮০০০ মানুষের জন্য ১ টি হাসপাতালে বেড আছে । অন্যদিকে যদি ১৪০ কোটি মানুষের ১% মানুষ অসুস্থ হয় তাহলে ১ .৪ কোটি হাসপাতালে বেডের প্রয়োজন আর এত পরিমাণ বেডের ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই । ফলে একসাথে বিপুল পরিমাণ মানুষ অসুস্থ হলে ভারতবর্ষের মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে তখন কিছু করার থাকবে না
, বা মৃত মানুষের পরিসংখ্যানের রেকর্ড ভুক্ত করে দিনের বাকিটা সময় অতিবাহিত করতে হবে মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে ।
অতএব সরকার যে লক ডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সম্পুর্ন সঠিক সিদ্ধান্ত । এটাই হল একমাত্র পথ , ভারতবর্ষে মানুষকে আর একটি মহামারী থেকে রক্ষা করতে , নিজেদের প্রিয় জনকে এই সুন্দর পৃথিবীতে আরো কিছু দিন বেঁচে থাকতে সহযোগিতা করতে , নিজে বাঁচতে এই লক ডাউন পথ অবলম্বন করা ছাড়া কোন উপায় ও বিকল্প রাস্তা নেই । এতে সরকার বা নেতা মন্ত্রীর কিছু আসে না , তারা আমাদের ভালোর জন্য করছে , আমাদের বেঁচে থাকার জন্য করছে , আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে লাঠি চার্জ করতে হচ্ছে , আমরা আমাদের ভালোটা কবে বুঝবো , কেন আমাদের প্রশাসন দিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভালো করতে হবে । তাই আসুন আমরা সকলে মিলে আমাদের এই ভারতবর্ষকে চীন , ইতালি , যুক্তরাষ্ট , স্পেনের মত মৃত্যুর আঁতুড়ঘরে পরিনত হওয়া থেকে রক্ষা করি । আমরা ভারতবাসী , এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয় । কোন রাজনীতি নয় , কোন মিথ্যা ধর্মের রেষারেষি নয় , সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে লক ডাউন সামিল হই , অংশ গ্রহণ করি , মেনে চলি আর লক গাউনের সাথে আমাদের জীবনকে সম্মান জানাই ।।
(তারিখ = ২৭/০৩/২০২০)©
Tags
Health