"ঝুমি নদী আর তুই"
ঝুমি নদী আর তুই
..........সুশান্ত আদক
এই তাে সেদিন ঝুমি নদীর তীরে
উছল উছল ঢেউ উঠেছে , তাের হাতটা ধরে ।
বাঁশের পােলে রােমান্স খ্যালে তুই তাকালে রােজ
স্কুটিটা তুই ধীরে চালাস , পাগলী , একটু বােঝ ।
তাের তাে এখন এগার ক্লাস গতরে সর্ষেফুল
জল টলমল ঝুমি যেন ছাপায় দুটি কুল—
ঝুমির জলে জ্যোৎস্না পড়ে দখিন হাওয়া মাতে
ইচ্ছে করে জেগে থাকি তাের সাথে চাঁদ রাতে ।
এবার বানেও পােল ভেঙেছে ! চলছে আবার খেয়া
ব্যস্ত তুই সেল্ফি তােলায় , ( টানে ) , ডাগর চোখের মায়া—
খেয়া ঘাটের সেল্ফিগুলাে যত্ন করে রাখিস
হােয়াটস্ অ্যাপে সময় করে ওগুলাে সেন্ড করিস
যমুনাতে জল ছুঁয়েছে , জল ছুঁয়েছে রাই
পরাণ - পিরীতে বাঁধা আছে তার কানাই ।
তাের মনের বাওয়াল ’ হয়ে আছি তাের - ই সনে
ঝুমি নদীর জল ছুঁয়ে দ্যাখ , পিরীত জাগে মনে ।...
ঝুমি নদী স্থানীয় কিছু কবি লেখকদের কলমের ছোঁয়ায়
বারবার উঠে এসেছে । যদিও ঝুমি নদীকে আগে
শঙ্কেশ্বরী নামেও ডাকা হত, তবে কিছু কিছু লেখায়
শঙ্কেশ্বরী হয়ে উঠেছে শঙ্খিনী নারী। যার অপরূপ রূপের
সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে বারবার বিভিন্ন কবির বর্ণনায় ।
এরার কবি সুশান্ত আদক মহাশয়ের লেখা কবিতা "ঝুমি
নদী আর তুই" কবিতাটা নিয়ে আমি আলোচনা করবো ।
যেখানে ঝুমি নদীর সৌন্দর্য মাধুর্য প্রকাশ পেয়েছে, সাথে
সাথে ঝুমি নদীকে যমুনার সাথে তুলনা করে উপস্থিত
করা হয়েছে এই কবিতায়। ঝুমি নদী, বাঁশের পোল, রাধা
কৃষ্ণের প্রেম , তরুণ তরুণীর প্রেম নিপুণ হাতে রঙ তুলি
দিয়ে একফ্রেমে যেন আটকে দিয়েছেন ।
কবি এই কবিতায় বলেছেন-
"এই তাে সেদিন ঝুমি নদীর তীরে
উছল উছল ঢেউ উঠেছে , তাের হাতটা ধরে "।
তিনি বলতে চেয়েছেন ঝুমি নদীর তীরে দুই তরুণ তরুণী
হাত ধরে চলেছে। তাদের মনের মধ্যে যেন ঝুমির ঢেউ
মতোই ঢেউ উঠেছে । অল্প মৃদুমন্দ বাতাসে যেমন ঝুমি
নদীর উপর ঢেউ খেলে যায় তেমনি এখানে এই প্রেমিক
প্রেমিকার মনেও সেই রকম প্রেমের তরঙ্গ ধরা পড়েছে।
" বাঁশের পােলে রােমান্স খ্যালে তুই তাকালে রােজ
স্কুটিটা তুই ধীরে চালাস , পাগলী , একটু বােঝ " ।
বাঁশের পোলের উপর অপেক্ষারত প্রেমিকের চোখে
প্রেমিকার চোখ পড়লে দুই জনেই রোমান্টিক হয়ে ওঠে ।
রোমান্টিক হয়েও রোমান্স পাশে রেখে প্রেমিকার খেয়াল
রাখে, আদর করে পাগলী বলে সম্বোধন করে এবং
সাবধান করে বলে এই বাঁশের পোলের উপর স্কুটিটা যেন ধীরে চালিয়ে যায়। এই থেকে প্রেমিকের যত্ন শীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রেমিক চায়না কোনভাবেই প্রেমিকার সামান্যতম কোন ভাবেই ক্ষতি হোক। সে জানে একটু অসাবধানতার জন্য এই বাঁশের পোল থেকে পড়ে প্রান চলে যেতে পারে বা কোন ক্ষতি হতে পারে , এ থেকে প্রেমিকের গভীর ভালোবাসার ও যত্নশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
"তাের তাে এখন এগার ক্লাস গতরে সর্ষেফুল
জল টলমল ঝুমি যেন ছাপায় দুটি কুল"—
যেমন ঘন সরষে ফুলের সৌন্দর্য মাধুর্য ফুটে ওঠে তেমনি ষোলো বছর বয়সী তরুণীর সৌন্দর্য লাবণ্য প্রকাশিত হয়েছে যে ভাবে ঝুমি বর্ষার ভরা যৌবন দুই কূল ছাপিয়ে প্লাবিত করে। এখানে খুব সংক্ষেপে তরুণীর সৌন্দর্য লাবণ্যকে কবি তুলে ধরেছেন।
" ঝুমির জলে জ্যোৎস্না পড়ে দখিন হাওয়া মাতে
ইচ্ছে করে জেগে থাকি তাের সাথে চাঁদ রাতে "।
ঝুমির জলের উপর জ্যোৎস্না পড়ে এবং দক্ষিণা বাতাস গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে মনে প্রবল প্রশান্তি এনে দেয়। এমনই এক মধুর চাঁদনি রাতে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে নিয়ে সারারাত জেগে প্রেম আলাপ করতে চাওয়ায় আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে।
"এবার বানেও পােল ভেঙেছে ! চলছে আবার খেয়া
ব্যস্ত তুই সেল্ফি তােলায় , ( টানে ) , ডাগর চোখের মায়া"----
কিন্তু বর্ষায় প্রতিবছর বাশেরপুল নদীর প্রবল স্রোতে ভেঙে যায়। শুরু হয় খেয়া পারাপার। নদীর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য , ভাঙাপোল, নৌকা পারাপার এই সবের সাথে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে অর্থাৎ সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে প্রেয়সি। প্রেমিক সেই ডাগর চোখের মায়ায় বিভোর হয়ে যায়।
"খেয়া ঘাটের সেল্ফিগুলাে যত্ন করে রাখিস
হােয়াটস্ অ্যাপে সময় করে ওগুলাে সেন্ড করিস " ।
প্রেমিক তার প্রেমিকার কাছে প্রেমময় সোনালী মুহূর্তের ছবি গুলি যত্ন করে রাখতে বলে এবং তার হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করতে বলে । হয়তো সেই মুহূর্ত আবার অনুভব করার জন্য, কোন এক ক্ষণিকের মুহূর্তে এক পলক দেখে নেবে ।
" যমুনাতে জল ছুঁয়েছে , জল ছুঁয়েছে রাই
পরাণ - পিরীতে বাঁধা আছে তার কানাই" ।
যমুনার জল ছুঁয়েছে রাই অর্থাৎ রাধা । আর সেই ছোঁয়ার কারনে রাধার ভালোবাসায় বাঁধা পড়েছে কানাই।
ঝুমি নদীর বাঁশের পোলের উপর সেই রাধা আর কানাইয়ের প্রেমলীলা যেন আরেক পুনরাবৃত্তির লীলা ধরা পড়েছে এই কবিতায়। বাংলা সাহিত্যের মিথ ভাবনা কবি এখানে টেনে এনেছেন । কবি কৃষ্ণ ও রাধার প্রেম দেখতে পেয়েছেন এই প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে । এই ঝুমি নদীর জলেই যেন রাধা ভালোবাসা পূর্ণ নরম কোমল হাত স্পর্শ করেছেন।
"তাের মনের বাওয়াল ’ হয়ে আছি তাের - ই সনে
ঝুমি নদীর জল ছুঁয়ে দ্যাখ , পিরীত জাগে মনে "।...
ঝুমি নদী যেন যমুনা হয়ে উঠেছে। তরুণ প্রেমিক তার প্রেমিকাকে বলছেন আমিতো তোমার মনের মধ্যেই আছি অভিমান, অনুরাগ, বোঝা না বোঝা, দ্বন্দ্ব , বিদ্বেষ, খুনসুটি , বাওয়াল হয়ে। একবার এই ঝুমি নদীর জল ছুঁয়ে দেখো আমিও তোমার প্রেমে ভালোবাসা বাঁধা পড়ে যাব কৃষ্ণের মতো। মনে প্রেমের পবিত্র ভালবাসা অনুভূতি জেগে উঠবে শুধু একবার ঝুমি নদীর জল ছুঁয়ে দেখো।
আলোচক - শ্যামল কুমার রং ।
Comments
Post a Comment