বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন কি কলকাতার প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রেরণা?

শ্যামল রং, ২২ আগষ্ট, ২০২৪: কয়েকদিন ধরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে যে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, তা ক্রমশই উত্তেজনার সৃষ্টি করছে রাজ্যজুড়ে। এ বিষয়ে বিরোধীদের মূল দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অবিলম্বে পদত্যাগ। এ দাবির সমর্থনে কলকাতার রাজপথে ভেসে আসছে বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক আন্দোলনের পরিচিত স্লোগান—‘দফা এক দাবী এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’।

এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক কোটা আন্দোলন কি কলকাতার এই রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রভাব ফেলছে? দুটি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও প্রতিবাদের কৌশলগত দিক থেকে কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কলকাতার বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কি তাহলে বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনের প্রেরণায় নতুন দিশা পাচ্ছে?

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুতই জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা, যারা ঢাকার শাহবাগ ও অন্যান্য শহরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান তোলেন ‘দফা এক, দাবী এক—কোটা সংস্কার’। 

প্রথমদিকে এই আন্দোলন নিয়ে সরকারের তেমন মাথাব্যথা না থাকলেও আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও জনসমর্থন বাংলাদেশের সরকারকে বাধ্য করে কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাতিল করতে। যদিও আন্দোলনকারীরা সংস্কার চেয়েছিল, তবে সরকার বিরোধী দলের বিরোধিতার মুখে পিছিয়ে এসে কোটা সম্পূর্ণ বিলোপ করে।


বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল এর স্লোগানের সরলতা ও তীব্রতা। ‘দফা এক, দাবী এক’ এই স্লোগানটি আন্দোলনের শক্তিকে কেবল শাণিত করেনি, বরং এটি দ্রুত গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আর জি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলো নতুন করে সরব হয়েছে। বিজেপি থেকে সিপিএম, কংগ্রেস থেকে অন্যান্য ছোট দল—প্রতিটি বিরোধী রাজনৈতিক দলই একই সুরে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে। এমনকি তাদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে ‘দফা এক, দাবী এক—মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’ স্লোগানটি যে ভীষণভাবে উঠে এসেছে, তা অনেকটাই বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনের স্লোগানের সঙ্গে মিল পাচ্ছে।

এই স্লোগানের মূল উদ্দেশ্য একটাই—মানুষের মধ্যে একাত্মতা তৈরি করে আন্দোলনকে এক বিন্দুতে স্থির করা। এক্ষেত্রে লক্ষ্য হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর পদত্যাগ। যেমন বাংলাদেশে আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি, তেমনি পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় দাবি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ।

 বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনের স্লোগান পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রভাব ফেলছে? কোটা আন্দোলন প্রমাণ করেছিল, একটি সরল ও শক্তিশালী স্লোগান আন্দোলনের গতিকে অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া, ছাত্র আন্দোলনের সাথে গণমানুষের সংযোগ স্থাপন করতেও এই স্লোগানটি কার্যকর হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গেও বিরোধী দলগুলি সম্ভবত এমনই একটি শক্তিশালী স্লোগানের মাধ্যমে জনমানসে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবাদী আন্দোলনে যে একটা দৃঢ়, ঐক্যবদ্ধ সুর থাকা প্রয়োজন, তা এই স্লোগানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে পারে বলে মনে করছে তারা।

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশেষ করে, আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণের ঘটনাটি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলগুলি এই ঘটনার প্রতিবাদে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেনি, বরং মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেছে।

এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন যেমন ছাত্র সমাজকে নেতৃত্বে এনে বড় আন্দোলনে পরিণত করেছিল, তেমনি কলকাতার বর্তমান আন্দোলনেও ছাত্র সমাজ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন পথ বের করার চেষ্টা চলছে। বিরোধীদের লক্ষ্য একটাই—মানুষের মনে একটি সহজ ও শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেওয়া, যেটা সরকারকে চাপে ফেলতে সক্ষম হবে।

 কলকাতার রাজনৈতিক আন্দোলনে কতটা প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, একটি বিষয় নিশ্চিত বলা যায়—দুই আন্দোলনের মধ্যে প্রতিবাদের পদ্ধতিগত মিল আছে। যেমন কোটা আন্দোলনের সময় একটি সারল্য ও দৃঢ়তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল, তেমনি কলকাতার বর্তমান আন্দোলনেও সেই একই কৌশল অনুসরণ করার প্রচেষ্টা চলছে। 

এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, প্রতিবাদের ভাষা এবং কৌশল শুধু একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং তা আন্তঃদেশীয় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার সময়ে এমন স্লোগান ও কৌশলগুলি বহুল ব্যবহৃত হতে পারে। 

শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের এই আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হয়, তা সময়ই বলবে। তবে একথা নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীরা নতুন করে রাজনৈতিক প্রতিবাদের পথে নামছে। 

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar
Mansuka khabar