শ্যামল রং, ২৮ আগস্ট, ২০২৪: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ এক উজ্জ্বল ও জ্বালাময়ী বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্ষণের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, "আমরা শুরুর দিন থেকে ধর্ষকের ফাঁসি চেয়েছি," যা এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টতই উল্লেখ করেছেন যে, ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে তিনি আসন্ন সপ্তাহে বিধানসভায় একটি বিল পাশ করিয়ে রাজ্যপালের কাছে পেশ করবেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেছেন, "আমরা বিশ্বাস করি ধর্ষকদের একমাত্র শাস্তি ফাঁসি।" এর পাশাপাশি, তিনি রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের সূচনা করারও ডাক দিয়েছেন। আগামী শুক্রবার বাংলার মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটগুলোতে ছাত্রছাত্রীরা ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করবেন। শনিবার প্রতিটি ব্লকে মিছিল ও ধরনা সংগঠিত হবে দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এছাড়াও, ১ সেপ্টেম্বর, রবিবার, সকল মা-বোনেরা প্রতিটি ব্লকে ধরনা প্রতিবাদ করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা ও উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, "কুচক্রী বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য নোংরা খেলায় মেতেছে। তারা যেমন বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করে চলেছে, তেমনই মূল আন্দোলনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়ে তা নস্যাৎ করতে চায়।" তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, "আমার প্রাণবায়ু দীপ্যমান ছাত্র-যুবরা যতদিন বুক চিতিয়ে লড়াই করবে, ততদিন কোনো মানববিরোধী ভাবনার প্রাণভোমরারা এই বাংলায় পা রাখতে পারবে না।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর ক্রমাগত আক্রমণের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, যা রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপের সৃষ্টি করেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন, "আজকের এই ঐতিহাসিক দিনটি আর.জি.করের বোন-সহ সারা ভারতের সকল নির্যাতিতা বোনকে উৎসর্গ করছি। সকল নির্যাতিতার পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।" তিনি ছাত্র-যুবসমাজের উদ্দেশে বলেন, "মানব সংসারে জ্ঞানালোকের ছটায় যা আলোকিত হয়, সেই কৃতিত্বের অধিকারী আমাদের ছাত্র-যুবসমাজ।" তাঁর এই বিবৃতি ছাত্রসমাজের মধ্যে এক নতুন চেতনার উদ্দীপনা জাগানোর প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা যাচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে, ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে একটি বিল বিধানসভায় আনা হবে। তিনি বলেন, "আগামী সপ্তাহে বিধানসভায় ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে একটি বিল পাশ করিয়ে রাজ্যপালের কাছে পেশ করবো।" মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং এই বিলটি পাশ করার ক্ষেত্রে কতটা সফলতা আসে তা এখন দেখার বিষয়। এই পদক্ষেপে মুখ্যমন্ত্রী সারা দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ছাত্র-যুবসমাজের সমর্থনে কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, "আগামী শুক্রবার বাংলার মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে গেটে দোষীর ফাঁসির দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করবেন।" এছাড়া, শনিবার সব ব্লকে ব্লকে মিছিল এবং ধরনা সংগঠিত হবে দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ১ সেপ্টেম্বর, রবিবার, সকল মা-বোনেরা ব্লকে ব্লকে ধরনা প্রতিবাদ করবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কর্মসূচি নির্যাতিতাদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন জানানোর পাশাপাশি, রাজ্যজুড়ে এক জোরালো বার্তা পাঠাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপটি মূলত বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আসলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ তাঁর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা বলে মনে করছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ ও বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেছেন, "কোনোরকম নৈরাজ্যবাদী শক্তিকে আমার বাংলায় অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেব না।" এই মন্তব্যে তাঁর দৃঢ় অবস্থান এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাঁর প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।