শুত্রুবার এক ঐতিহাসিক রায়ে একথা জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট । আদালতের ব্যাখ্যা , সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি তার বৈধ পাসপাের্ট না থাকার কোনও তবে তিনি পাসপাের্ট ছাড়াই নাগরিকত্বের আবেদন জানানাের উপযুক্ত বলে গণ্য হবেন । শুক্রবার এক বিদেশীর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য
জানান , ২০০৯ সালের নাগরিকত্ব আইনের ১১ নং ধারা অনুসারে , পাসপাের্ট না থাকার যথােপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তিনি সরকারের কাছে নাগরিকত্বের আবেদন জানাতে পারবেন । সম্প্রতি মামলাকারী বিসমিল্লা খান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জানান , বৈধ পাসপাের্ট না থাকার কারণে তিনি অনলাইনে নাগরিকত্বের আবেদনপত্র জমা করতে পারছেন না । যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে তিনি চেয়েও ভারতের নাগরিকত্ব পাচ্ছেননা । মামলাকারীর তরফে আইনজীবী শর্মিষ্ঠা পােদ্দার জানান , তাঁর মক্কেল বিসমিল্লা খান আসলে অধুনা আংশিক পাকিস্তান এবং আংশিক আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্ত পাখতুন প্রাদেশের নাগরিক । ১৯৭৩ সালে পাখতুন প্রদেশে রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি পরিবারের সঙ্গে সেদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন । তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর । শরণার্থী হিসাবে কোনওমতে প্রাণ হাতে করে ভারতে পালিয়ে আসার সময় তার কাছে কোনও পাসপাের্ট ছিল না । তারপর থেকে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন জানাতে না পারায় শরণার্থী হয়েই দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে বিসমিল্লা ও তার পরিবারকে । তবে আবেদনকারী ১৯৮৯ সালে ভারতে কাজ করা পাখতুন সংগঠনের দেওয়া একটি পরিচয়পত্র দেখিয়েছেন । এর মধ্যে তিনি হায়দরাবাদের তরুণী গুলনার খানমকে বিয়ে করেছেন । তাঁদের কন্যাসন্তান কলকাতার একটি নামী স্কুলে পড়ে । আইনজীবী আরও জানান , একাধিকবার বিসমিল্লা এদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন ব্রতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে । পরে যখন অনলাইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার পরিষেবা চালু হয় তখন সেখানে আবেদন করতে গিয়েও তাকে জটিলতায় পড়তে হয়েছে । কারণ সেখানে পাসপাের্ট থাকা বাধ্যতামুলক বলা রয়েছে । এবং পাসপোর্ট নম্বরও দিতে বলা হয়েছে । সেকারণেই তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ ল । আইনজীবীর দাবি , ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ৫ ( ১ ) ( সি ) ধারায় বলা হয়েছে , যদি কোনও ব্যক্তি কোনও ভারতীয়কে বিয়ে করেন এবং ভারতে সাতবছরের বেশি সময় থাকেন তাহলেই তিনি ভারতীয় নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন । তাহলে তার মক্কেল কেন পারবেন না ? পালটা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কৌঁসুলি জানান , নাগরিকত্ব পাওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী তিনি আবেদন করেননি । তার তরফ থেকে কোনও আবেদন কেন্দ্রের ঘরে জমা পড়েনি । যখন আবেদনই জমা পড়েনি , তখন তা মঞ্জুরেরও প্রশ্ন উঠছে না । একই কথা বলেন রাজ্য সরকারের আইনজীবীও । সবপক্ষের মতামত শুনে বিচারপতি জানান , যদি কোনও ব্যক্তি এদেশে সাত বছরের বেশি সময় থেকে থাকেন এবং এক ভারতীয়কে বিয়ে করে থাকেন , তাহলে তার নাগরিকত্বের আবেদনে পাসপাের্ট বাধ্যতামূলক নয় । আদালতের পর্যবেক্ষণ , নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী , নাগরিকত্বের আবেদনপত্রে বৈধ পাসপাের্ট এবং অন্যান্য নথি সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেগুলি বাধ্যতামূলক অতএব , পাসপাের্ট তথ্য দেওয়াটাকে এক্ষেত্রে অপশনাল বলে ধরে নিতে হবে । আর , পাসপাের্ট প্রদর্শন যখন বাধ্যতামূলক নয় , তখন পাসপাের্ট না থাকার উপযুক্ত কারণ দর্শানাের পর সেই ব্যক্তি নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন । সেক্ষেত্রে তার আবেদনপত্র অসম্পূর্ণ বলেও অস্বীকার করা যাবে না । পাসপাের্ট ছাড়াই যাতে প্রার্থীরা নাগরিকত্বের আবেদন জানাতে পারেন , সেজন্য সফটওয়্যারেও প্রয়ােজনীয় বদল আনার সপক্ষে সওয়াল করেছেন বিচারপতি ।
Tags
Political