নবনিযুক্ত ধর্মান্তর আইন এবং বিতর্ক: উত্তর প্রদেশের প্রেক্ষাপট

কোলকাতা, ৩১জুলাই, ২০২৪: উত্তর প্রদেশ সরকার সম্প্রতি একটি নতুন ধর্মান্তর আইন পাস করেছে, যা জনমত ও আইনি মহলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। "উত্তর প্রদেশ ধর্ম স্বতন্ত্র অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০২৪" নামক এই আইনটি মূলত জোরপূর্বক, প্রতারণার মাধ্যমে, বা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তর প্রতিরোধের জন্য প্রণীত হয়েছে। তবে, এর পরিধি ও প্রয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

আইনটির প্রধান বৈশিষ্ট্য

১. সংজ্ঞা ও বিধি

   আইনটি নির্ধারণ করেছে কোন পরিস্থিতিতে ধর্মান্তর বৈধ বা অবৈধ। এর মধ্যে রয়েছে জোরপূর্বক, প্রতারণামূলক, বা আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তর। এছাড়া, ধর্মান্তরের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের বাধ্যতামূলকভাবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন জমা দিতে হবে।

২. শাস্তি

   আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। জোরপূর্বক ধর্মান্তরের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ২৫,০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। শিশু, মহিলা, বা তফসিলি জাতি ও উপজাতি সদস্যদের ক্ষেত্রে শাস্তি আরও কঠোর, যা ৩ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০,০০০ টাকা জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে।

৩. বিয়ের ক্ষেত্রে ধর্মান্তর

   ধর্মান্তর শুধুমাত্র বিয়ের উদ্দেশ্যে করা হলে সেটি অবৈধ ঘোষণা করা হবে, যদি না তা প্রমাণ করা যায় যে ধর্মান্তর ব্যক্তি স্বেচ্ছায় করেছেন। এর জন্যও পূর্বেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদন প্রয়োজন।


 বিতর্ক ও সমালোচনা

নতুন এই আইনটি নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, আইনটি সংবিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী এবং এটি মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। 

 ১. ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংবিধান

অনেকের মতামত, এই আইনটি ভারতের সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার বিরুদ্ধে, যা প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিককে নিজের পছন্দমত ধর্ম পালন ও প্রচারের স্বাধীনতা দেয়।

 ২. বিধানের অপব্যবহার

সমালোচকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই আইনের মাধ্যমে বিশেষ করে মুসলিম ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই আইনের অপব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হতে পারে।

 ৩. বিধানের অস্পষ্টতা

আইনে 'জোরপূর্বক', 'প্রলোভন', এবং 'প্রতারণা'র সংজ্ঞা স্পষ্ট না হওয়ায়, এর অপব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। আইন প্রয়োগকারীদের মর্জি অনুযায়ী এসব ধারণা প্রয়োগ হতে পারে, যা নাগরিকদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

 প্রশাসনের বক্তব্য

উত্তর প্রদেশ সরকার ও আইন প্রণেতারা এই আইনটিকে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন, যেখানে অভিযোগ উঠেছিল যে, কিছু ব্যক্তি নির্দিষ্ট ধর্মে লোকদের ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা করছিলেন। সরকার দাবি করেছে যে, এই আইনটি শুধুমাত্র জোরপূর্বক ধর্মান্তর প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে এবং এতে কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘুর লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে না।

 আইনগত চ্যালেঞ্জ ও পরবর্তী পদক্ষেপ

এই আইনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, আইনজীবী, ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এই আইনকে অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক হিসেবে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। উচ্চ আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে এই মামলাগুলো চলমান রয়েছে।

উত্তর প্রদেশের নতুন ধর্মান্তর আইন একটি জটিল ও বিতর্কিত বিষয়। এই আইনের প্রয়োগ ও প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে কেমন হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, এর মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘু অধিকারের সুরক্ষা নিয়ে একটি নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে, যা ভারতের সংবিধান ও সমাজের মৌলিক নীতিগুলোর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা উত্থাপন করছে।

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar
Mansuka khabar