ঘাটাল, ১৪ই আগষ্ট,২০২৪: আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৫-তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে তাঁর জন্মস্থান মেদিনীপুর (অধুনা, পশ্চিম মেদিনীপুর) বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে। এই উপলক্ষে জেলার প্রতিটি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী সমিতির বর্ধিত বৈঠকে (গত ২১ জুলাই, ২০২৪) সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রস্তাবে জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে 'বীরসিংহের সিংহ শিশু' তথা সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা গদ্যের এক সার্থক শিল্পী ও স্রষ্টা এবং বাঙালির নবজাগরণের অগ্রদূত। তাঁর শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে তাঁর মহান আদর্শ প্রচারের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের মানুষকে একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে আবেদন জানানো হয়েছে যাতে গণ-উদ্যোগের মাধ্যমে এই মহতী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী সমিতির পক্ষ থেকে এই আবেদনটি গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “বিদ্যাসাগর ছিলেন আমাদের সমাজের এক মহান পথপ্রদর্শক। তাঁর আদর্শ, চিন্তা ও কীর্তিগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচার করতে পারলে নতুন প্রজন্ম আরও সুশিক্ষিত, সুনাগরিক হয়ে উঠবে। তাই আসুন, আমরা সবাই এই উদ্যোগে শামিল হই এবং বিদ্যাসাগরের শিক্ষা ও সংস্কারমূলক আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।”
এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে মনসুকা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের পক্ষ থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ের গ্রামীণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি, সচিব (প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা) ও অন্যান্য সদস্য সমন্বয়ে একটি তদারকি সভার আয়োজন করা হয়। গত ৯ই আগস্ট অনুষ্ঠিত এই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও দানশীল ব্যক্তিদের দাক্ষিণ্য ব্যতীত এহেন মহতী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়।
গ্রামীণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি জানান, “শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান অমূল্য। আমরা এই মহতী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, এলাকাবাসীর সহায়তায় আমরা সফল হতে পারব।”
এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহাশয়গণকে অবগত করা হয়েছে এবং তাঁদের কাছ থেকেও ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকারা ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বিদ্যালয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ, মূর্তি নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
মূর্তি স্থাপনের উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করতে এলাকায় বেশ কিছু দানশীল ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী বলেন, “বিদ্যাসাগরের মতো মহান ব্যক্তির মূর্তি স্থাপন করে আমরা শুধু তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি না, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার প্রচেষ্টা করছি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “বিদ্যাসাগরের মূর্তি বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। এই উদ্যোগে সামিল হতে পেরে আমরা গর্বিত।”
জেলার সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপনের এই উদ্যোগ সফল হলে তা হবে এক অবিস্মরণীয় পদক্ষেপ। বিদ্যাসাগরের শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের আদর্শকে তুলে ধরতে এই প্রয়াস যথেষ্ট কার্যকরী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূর্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাঁর অনুপ্রেরণায় আলোকিত করতে সক্ষম হব।
বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নেওয়া এই উদ্যোগের সাফল্যের জন্য, শিক্ষাপ্রেমী ও দানশীল ব্যক্তিদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, আমরা সবাই একযোগে এই মহতী পরিকল্পনার বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং বিদ্যাসাগরের শিক্ষাদর্শনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই।