তসলিমা নাসরিনের ক্ষোভ: রাজাকারের বাচ্চাদের স্বাধীনতা নয়, সন্ত্রাসের রাজত্ব

কোলকাতা, ৯ আগষ্ট, ২০২৪: বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ নিয়ে সরব লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজে তিনি এক খোলা পোস্টে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে দেশের নানা সমস্যার কথা, যা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করছে বলে তার অভিযোগ।


তসলিমা নাসরিন তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন, "রাজাকারের বাচ্চারা এমন সুযোগ বাংলাদেশে পায়নি কখনও। এদের রাগ মুক্তিযুদ্ধের ওপর, রাগ মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর, তাই ভেঙ্গে ফেলছে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতি, মুছে ফেলছে বাংলাদেশের ইতিহাস।" তার এই অভিযোগ প্রমাণ করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মকে বিচ্ছিন্ন করার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, "দেশ জুড়ে লুট তরাজ, খুন ডাকাতি, অপহরণ ধর্ষণ, আর সমস্ত শিল্প কর্ম ধ্বংসের মধ্য দিয়ে এই রাজাকারের বাচ্চারা তাদের 'স্বাধীনতা' এনেছে বলে মনে করছে। এর নাম স্বাধীনতা নয়, এর নাম সন্ত্রাস।" তসলিমার মতে, এই সব ঘটনা দেশের ভেতর একটি অস্থিতিশীল ও আতঙ্কিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম হচ্ছে, তসলিমা নাসরিন তা পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, যারা এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে তারা নিজেদেরকে 'স্বাধীনতা'র সৈনিক বলে দাবি করছে, কিন্তু আসলে তারা দেশকে আরও বেশি বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

তিনি বলেন, "সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে দেশ জুড়ে।" এভাবেই তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন, যেখানে জনগণের মধ্যে ভয় এবং অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। তার দাবি, এই ধরনের সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে তার মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে দিচ্ছে এবং একটি অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করছে।

তসলিমা নাসরিনের পোস্টে তার গভীর উদ্বেগ ও হতাশা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যা দেশকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তা আজকের প্রজন্মের কাছে খুব একটা অর্থপূর্ণ নয়। বরং, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই চেতনাকে একটি ভঙ্গুর অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

তসলিমার এই বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ কেউ এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং সামাজিক পর্যায়ে এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করেন, তসলিমা নাসরিনের এই বক্তব্য অতিরঞ্জিত এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি অতিরিক্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক। দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাট, খুন, ডাকাতি, এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি, দেশের ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোর প্রতি যে অবহেলা করা হচ্ছে, তা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তসলিমা নাসরিনের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলে আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই চেতনা দেশের অস্তিত্বের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাখ্যা ও প্রয়োগেরও পরিবর্তন হওয়া উচিত।

তসলিমা নাসরিন বরাবরই স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের পক্ষে কথা বলেন। তার লেখায় এবং বক্তব্যে সবসময়ই সমাজের বিভিন্ন অসংগতি, বিশেষ করে নারীদের প্রতি অন্যায়, ধর্মীয় কুসংস্কার এবং রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ দেখা যায়। 

তার সাম্প্রতিক এই পোস্টের মাধ্যমে তিনি দেশের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার এই মন্তব্য বর্তমান প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানায়।

তসলিমা নাসরিনের পোস্ট বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি স্পষ্ট এবং তীক্ষ্ণ সমালোচনা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে টিকিয়ে রাখার এবং দেশকে সন্ত্রাসের গ্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য একটি সুসংহত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। এই পোস্ট যে শুধু একটি সাধারণ মতামত নয়, বরং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি গভীর উদ্বেগ, তা স্পষ্ট। 

তবে, এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে, কারণ এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার একটি সংবেদনশীল দিককে স্পর্শ করেছে। এই ধরনের আলোচনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে বলে আশাবাদী অনেকে।

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

Mansuka Khabar

Mansuka khabar
Mansuka khabar