আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

কলকাতা, ১৩ আগস্ট,২০২৪: পশ্চিমবঙ্গের আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সিবিআই (কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই নির্দেশ জারি করে। কেস ডায়েরী খতিয়ে দেখার পর বিচারপতিরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন। রাজ্য সরকারের হাতে থাকা সমস্ত তথ্য-প্রমাণ, নথি এবং পুলিশের সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজ সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।


আদালত স্পষ্টতই জানিয়েছে, এই তদন্ত হবে আদালতের নজরদারিতে। ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, তিন সপ্তাহ পর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন সিবিআই-কে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। মামলায় রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম। তিনি বলেন, নিহত নির্যাতিতার বাবা-মা'র আশঙ্কা, এভাবে তদন্ত চললে তা সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছবে না।

আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। আজকের শুনানিতে মৃতার পরিবারের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতকে জানান, প্রথমে পরিবারকে কেউ ফোন করে জানায় যে তাঁদের মেয়ে অসুস্থ। তারপর আবার ফোন করে বলা হয় যে, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে, দৃশ্যতই খুনের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও প্রথমে 'অস্বাভাবিক মৃত্যু'র মামলা রুজু করা হয়েছিল। কেন এই ধরনের মামলা রুজু করা হয়েছে, তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন ওঠে।

এই ঘটনার তদন্তের প্রথম থেকেই আর.জি. কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আদালত জানিয়েছে, অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে তাঁরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। গতকাল, অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্দীপ ঘোষকে আরেকটি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হয় এবং তার ১৫ দিনের ছুটির আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি। এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং নির্দেশ দেন যে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তিনি আর কোনো মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে পারবেন না।

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করা হয়েছিল। তবে আদালত রাজ্যের আইনজীবীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হননি। মামলাকারীদের তরফে অবিলম্বে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়। আদালত সেই দাবিকে মেনে নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।

কেস ডায়েরী দেখার পর মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি সাংবাদিকদের জানান, কেস ডায়েরী তাঁদের সওয়ালকে আরও মজবুত করেছে। আদালতের এই নির্দেশে নির্যাতিতার পরিবার কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এই মর্মান্তিক ঘটনা এবং তার পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিয়ে গোটা রাজ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে, ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন সকলের নজর সিবিআই তদন্তের দিকে, যা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতে জমা দেবে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এই ঘটনা, এবং সিবিআই তদন্ত কীভাবে এ মামলার সঠিক সমাধান এনে দেবে, তা দেখার জন্য সবার নজর থাকছে।

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar
Mansuka khabar