আফগান নারীদের অধিকার হরণের শেষ পর্বে তসলিমা নাসরিনের প্রতিবাদী কণ্ঠ

শ্যামল রং, ঘাটাল, মেদিনীপুর: প্রাচীনকাল থেকেই আফগানিস্তান একটি ঐতিহ্যবাহী জাতি হিসেবে পরিচিত, যেখানে একসময় নারীরাও ছিল উন্নয়নের অংশীদার। ১৯১৯ সালে যখন আফগান নারীরা প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার অর্জন করে, সেই সময়ে এমন অনেক উন্নত রাষ্ট্রও নারীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা ভোটাধিকার পায় তার এক বছর পর, ১৯২০ সালে। আফগানিস্তানে প্রথম মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। এমন এক সময়ে এই উদ্যোগগুলো ছিল এক অসাধারণ অগ্রগতির প্রতীক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক যে, যেন সেসব ইতিহাস হয়ে গেছে কেবল কাগজে-কলমে। আফগান নারীদের জন্য বাস্তব জীবনে কোনো অধিকারই অবশিষ্ট নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের লেখিকা ও সমাজসেবী তসলিমা নাসরিন, যিনি সম্প্রতি তার ফেসবুক পোস্টে এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানান।


তসলিমা নাসরিন, যিনি তার সাহসী লেখনির জন্য পরিচিত, তার সাম্প্রতিক পোস্টে আফগান নারীদের প্রতি তালিবান শাসকদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি তুলে ধরেন। পোস্টে তসলিমা স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, ‘‘এই আফগান মেয়েদের এখন অধিকার বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। মেয়েদের সব অধিকার চিবিয়ে খেয়েছে ধর্ম।’’ তিনি আরো জানান, নতুন আইন অনুযায়ী আফগান নারীদের এমনভাবে নিপীড়িত করা হচ্ছে যাতে তাদের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত আশেপাশের কেউ না শুনতে পায়।

বর্তমান তালিবান সরকারের শাসনে আফগান নারীদের জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। তসলিমা নাসরিন উল্লেখ করেছেন, আইন করে বাধ্য করা হচ্ছে যাতে নারীরা অনাত্মীয় পুরুষের দিকে তাকাতে না পারে। আফগান নারীদের জন্য এমন একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে যেখানে আজান দেওয়া, গান গাওয়া, এমনকি সাধারণ শিক্ষা লাভ করার অধিকারও হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তালিবানদের মতে নারীরা যদি কোনোভাবেই সমাজে দৃশ্যমান না হয়, তাহলে সেটাই হবে ইসলামের সঠিক নির্দেশনা পালন। তসলিমা নাসরিন এই অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘মেয়েদের আজান দেওয়া হারাম, সুতরাং মেয়েদের গান গাওয়াও হারাম। মেয়েদের স্কুল কলেজে পড়া হারাম, চাকরি বাকরি ব্যবসা বাণিজ্য করা হারাম।’’

নারীর প্রতি এই অত্যাচার ও নিপীড়নকেই তসলিমা ‘‘ধর্মের নামে শাসন’’ বলে আখ্যা দেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এভাবে কি বেঁচে থাকা সম্ভব? এভাবে বেঁচে থেকে কীভাবে আফগান নারীরা সহ্য করছে এই দুঃসহ যন্ত্রণা? তসলিমার মতে, তালিবান শাসকদের মতো বর্বর শক্তি নারীদের ঘৃণা করে, তবুও গুলি করে মেরে ফেলছে না, বরং তাদেরকে জীবিত রেখেই পুরুষদের সেবা করার জন্য বাধ্য করছে। তিনি বলেন, ‘‘সম্ভবত মেরে ফেলছে না, এইজন্য যে, মেয়েরা বেঁচে থেকে যেন পুরুষের সেবা করে, পুরুষের ঘর দোর সাফ করে, পুরুষের খাবার দাবার রান্না করে, পুরুষের কাপড় চোপড় পরিস্কার করে।’’

আরও পড়ুনঃ ফেসবুকে ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট: জিহাদিদের কুকীর্তির শিকার তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিনের মতে, তালিবান শাসকেরা নারীদের শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভূমিকার মধ্যে আটকে রাখতে চায়। নারীরা যেন কেবলমাত্র পুরুষের ঘর সামলানোর কাজে নিয়োজিত থাকে। এছাড়াও, তালিবানরা নারীদেরকে শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে দেখতে চায় বলে উল্লেখ করেন তসলিমা। তিনি বলেন, ‘‘তারা চায় নারীরা যেন পুত্রসন্তান প্রসব করে।’’ এভাবে নারীর ভূমিকা শুধুমাত্র ঘর-সংসারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, যা এক ধরনের নিষ্ঠুর বঞ্চনা।

তসলিমা নাসরিন এই পোস্টে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। আফগানিস্তানে তালিবানদের কঠোর শাসন ব্যবস্থা এবং নারীদের অধিকার হরণের বিষয়ে বিশ্ব নেতারা কেবল মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেই ক্ষান্ত হন। কিন্তু আফগান নারীদের মুক্তির জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। এমন অবস্থায় তসলিমার পোস্টটি সচেতন মহলে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, তালিবান শাসন যদি এইরকম নিপীড়ন চালাতে থাকে এবং আন্তর্জাতিক মহল যদি নির্বিকার থাকে, তবে আফগানিস্তানের নারীদের পক্ষে তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় দানা, দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি

আফগানিস্তানে নারীদের এই নিপীড়ন শুধু তাদের মানবাধিকারকে নষ্ট করছে না, বরং তাদের স্বাধীন অস্তিত্বকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নারীরা যেখানে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে না, সেখানে তাদের স্বাধীন চিন্তার জায়গাটিও হারিয়ে যাচ্ছে। আফগান নারীদের জন্য তালিবান শাসকদের অত্যাচার যেন এক নিরবচ্ছিন্ন ক্রীড়া হয়ে উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে প্রতিদিন নারীদের অধিকারকে চূর্ণ করছে। তসলিমা নাসরিন এই অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, এভাবে কি নারীদের বাঁচিয়ে রাখার মানে আছে?

এই লেখাটি ক্লিক করে আমাদের Mansuka Khabar হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন

তসলিমা নাসরিনের এই পোস্ট বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের নারীদের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। তিনি মনে করিয়ে দেন যে নারীদের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়। আফগানিস্তানের নারীদের যে অধিকার একসময় ছিল, সেটি আজ তালিবানদের মাধ্যমে খর্ব করা হয়েছে। তিনি এই পরিস্থিতিকে কেবল একটি দেশের সমস্যা নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের নারী অধিকার এবং মানবাধিকার প্রশ্নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তসলিমা নাসরিনের এই সাহসী পোস্টটির মাধ্যমে তিনি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আফগান নারীদের করুণ পরিস্থিতির প্রতি। এভাবে তিনি প্রতিটি সমাজকে স্মরণ করিয়ে দেন যে নারীদের অধিকার রক্ষা করা একান্ত জরুরি, কারণ নারী অধিকার খর্ব হলে সমগ্র মানবতারই অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar
Mansuka khabar