ফেসবুকে ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট: জিহাদিদের কুকীর্তির শিকার তসলিমা নাসরিন

শ্যামল রং, ২৪ অক্টোবর ২০২৪: বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, যিনি বরাবরই ধর্মীয় মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সরব, সম্প্রতি তার ফেসবুক একাউন্ট নিয়ে চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। নিজের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি অভিযোগ করেছেন, কিছু জিহাদি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ফেসবুকে ভুয়া মৃত্যু সনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) পাঠিয়েছে। এ কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার একাউন্ট ‘মেমোরিয়ালাইজ’ করে দিয়েছে, যা মূলত মৃত ব্যক্তির একাউন্টের জন্য নির্ধারিত ব্যবস্থা।

তসলিমা তার পোস্টে লিখেছেন, গত তিন দিন ধরে ওই জিহাদিরা তার মৃত্যুকে উদযাপন করেছে। তারা তার মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়িয়ে আত্মহারা আনন্দে মেতে উঠেছে। ফেসবুকের সিস্টেম ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে, অথচ নানা ধরণের অন্যায় এবং অপকর্ম সহজেই ধরা পড়ে ফেসবুকের অ্যালগরিদমে। তার মতে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই ভুয়া তথ্য যাচাই না করেই একাউন্ট মেমোরিয়ালাইজ করে দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় দানা, দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি

তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য অনুযায়ী, তার বিরোধীরা তার প্রতি এমন বিদ্বেষ পোষণ করে যে তারা তার মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়িয়ে তাকে অপদস্থ করতে চেয়েছে। তিনি লিখেছেন, "আল্লাহু আকবর বলে আমার কণ্ঠনালী কাটার জন্য তারা গত তিরিশ বছর ছুরিতে শান দিচ্ছে।" তবে তাদের এই প্রচেষ্টা শুধুই অনলাইনে সীমাবদ্ধ থাকেনি; এর আগেও তার জীবন নিয়ে নানা হুমকি ও আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে তাকে।

তসলিমা নাসরিনের পোস্টে দার্শনিক এক দিকও উঠে এসেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে মৃত্যুর আগে মানুষের মনের অবস্থা কীভাবে পরিবর্তিত হয়। যারা তার মৃত্যুর ভুয়া খবর প্রচার করে উদযাপন করেছে, তাদের মানসিকতার দিকে আঙুল তুলে তিনি লিখেছেন, "মৃত্যুর আগে মৃত্যু হয়ে গেলে মানুষের চেহারা বেশ চমৎকার দেখা যায়। কারা আনন্দ করে, কারা দুঃখ পায়, কারা ভাবে, কারা থাকে নির্বিকার।" এই কথাগুলো তার সৃজনশীল এবং তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের পরিচয় বহন করে।


তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক একাউন্ট মেমোরিয়ালাইজ হওয়ার এই ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বা কারও ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা রোধে ফেসবুকের ভূমিকা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এমন একটি প্ল্যাটফর্মে, যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ তথ্য শেয়ার করেন, সেখানে এমন ভুয়া তথ্য কীভাবে অবাধে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা যাচাই না করেই কার্যকর করা হয়—এমন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

এই লেখাটি ক্লিক করে আমাদের Mansuka Khabar হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন

তসলিমা নাসরিন দীর্ঘদিন ধরেই প্রান্তিক অবস্থানে থেকে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন। তার লেখনী ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ক্ষুব্ধ করেছে, যার ফলে তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তবে এমন ঘটনায় তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরো একবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল। 


তসলিমার ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে এই বিতর্ক আবারও প্রমাণ করল, আজকের বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়া যেমন মত প্রকাশের সুযোগ দেয়, তেমনি একে ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতেও কিছু মানুষ পিছুপা হয় না।

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar
Mansuka khabar