ঘাটালের মহকুমা শাসকের বক্তব্য: দিনময়ী দেবীর অবদান ও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সাফল্য

ঘাটাল, ১৩ আগস্ট,২০২৪: মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস সম্প্রতি চন্দ্রকোনার ক্ষীরপাই পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত একটি রক্তদান শিবিরে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে উত্থাপন করেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস যা আজকের প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনে দিনময়ী দেবীর অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন তিনি, যা আমাদের কাছে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ব্যক্তিত্বের এক অনন্য দিক প্রকাশ করেন।


মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস জানান, পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শিক্ষা ও সাফল্যের পেছনে দিনময়ী দেবীর এক অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, "বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনে দিনময়ী দেবীর সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা ছিল অসামান্য। তিনি ছিলেন বিদ্যাসাগরের সহধর্মিণী এবং পুরো পরিবারকে আগলে রাখার দায়িত্ব পালন করতেন, যার ফলে বিদ্যাসাগর মহাশয় নিশ্চিন্তে সমাজসেবার কাজে মনোনিবেশ করতে পেরেছিলেন।"

ক্ষীরপাই পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাছারীবাজারে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শ্বশুরালয় অবস্থিত। মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস উল্লেখ করেন, "ক্ষীরপাই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শ্বশুরালয়। এখানেই শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্য তাঁর মেয়ে দিনময়ী দেবীকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সঙ্গে বিবাহ দেন। দিনময়ী দেবী ছিলেন সেই শক্তি, যিনি বিদ্যাসাগরকে তাঁর শিক্ষা ও সমাজসেবার পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করেছিলেন।"

মহকুমা শাসক তাঁর বক্তব্যে আরো উল্লেখ করেন যে, ঘাটাল মহকুমাতে দিনময়ী দেবীর স্মৃতিতে তেমন কোনো মূর্তি নেই। তবে, কেবলমাত্র সিংহডাঙ্গায় দিনময়ী বিদ্যালয়ে একটি মূর্তি রয়েছে। এই বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি ক্ষীরপাই পৌরসভার চেয়ারম্যান দুর্গাশঙ্কর পানকে অনুরোধ করেন, "দিনময়ী দেবীর স্মৃতিকে রক্ষা করতে ও তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ক্ষীরপাইতে একটি মূর্তি স্থাপন করা উচিত।"

দিনময়ী দেবীর শিক্ষার প্রতি আগ্রহ এবং সমর্থনের কথা উল্লেখ করে মহকুমা শাসক বলেন, "দিনময়ী দেবী নারী শিক্ষার বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের একনিষ্ঠ সহধর্মিণী হিসেবে তিনি বরাবরই নারী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে সক্রিয় ছিলেন। এমনকি, একদিন তিনি বিদ্যাসাগরকে বলেছিলেন, ‘আমাদের সময় যদি তোমার মতো কেউ থাকত, তাহলে আমরাও পড়তে পারতাম।’ এই উক্তি থেকে দিনময়ী দেবীর শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষার পরিচয় পাওয়া যায়।"

ক্ষীরপাই বয়েজ ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরে মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাসের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ক্ষীরপাই পৌরসভার পৌরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পান, উপ পৌরপ্রধান আল্পনা পাত্র এবং কাউন্সিলর সমাপ্তি পন্ডিত সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। শিবিরে ৫৬ জন স্বেচ্ছাসেবক রক্তদান করেন, যা স্থানীয় এলাকার মানুষের মধ্যে মানবিক চেতনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন ঘটায়।

ক্ষীরপাই পৌরসভার কাছারীবাজারে অবস্থিত ভট্টাচার্য পরিবারের বাড়ি, যেখানে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শ্বশুরালয় ছিল, তা স্থানীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস জানান, শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্য বিদ্যাসাগরের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, "তোমার ধন নাই, কিন্তু তোমার পুত্র বিদ্বান। তাই আমি আমার প্রাণসখা তনয়া দিনময়ীকে তোমার পুত্রের হাতে তুলে দিলাম।" এই কথার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতি তাঁর শ্বশুরের সম্মান এবং আস্থা।

দিনময়ী দেবীর অবদানকে সম্মান জানিয়ে মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস যে বক্তব্য রেখেছেন, তা বর্তমান প্রজন্মের জন্য এক মূল্যবান বার্তা বহন করে। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সাফল্যের পেছনে দিনময়ী দেবীর সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ক্ষীরপাই পৌরসভায় দিনময়ী দেবীর স্মৃতিতে একটি মূর্তি স্থাপন করার আহ্বান জানিয়ে মহকুমা শাসক তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

এই ধরনের উদারচিত্ত এবং সুশিক্ষিত মহিলার স্মৃতি যেন আমাদের সমাজে চিরকাল অমলিন থাকে, সেই জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। দিনময়ী দেবীর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, তাঁর মতো মহিলাদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা স্মরণ রাখতে হবে, যাঁদের জন্য বিদ্যাসাগরের মতো মহাপুরুষ আমাদের সমাজে আসতে পেরেছিলেন।

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

Mansuka Khabar

Mansuka khabar
Mansuka khabar