শ্যামল রং, ১৩আগষ্ট, ২০২৪: আগামী ১৪ই আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে উদযাপিত হবে কন্যাশ্রী দিবস। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমাজে মেয়েদের সমান অধিকার প্রদানের লক্ষ্যে চালু হয়েছিল। কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় মেয়েরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত সুবিধা পাচ্ছে না, বরং তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে একটি মজবুত ভিত রচনা হচ্ছে। এই বিশেষ দিনে ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস মহাশয় কন্যাশ্রী প্রকল্পকে উৎসর্গ করে একটি হৃদয়স্পর্শী কবিতা রচনা করেছেন। এই প্রতিবেদন সেই কবিতার আলোকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের বিভিন্ন দিক ও তার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করবে।
আগামী ১৪ই আগষ্ট কন্যাশ্রী দিবস উপলক্ষে সুমন বিশ্বাস মহাশয়ের লেখা-
কন্যাশ্রীর কবিতা
সুমন বিশ্বাস
আমি কন্যাশ্রী, আমি ভাগ্য লিখি নিজের হাতে।
আমি প্রগতি, আমি এগিয়ে চলি সবার সাথে।
আমি দিন বদলের স্বপ্ন দেখি বিশ্ব জয়ের,
আমি দশভূজায় বিনাশ করি অবক্ষয়ের।
আমি অমানিশা রাতের শেষে ভোরের আলো,
আমি আপন মনের মাধুরীতে জ্বালি আলো।
কন্যাশ্রী, কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার স্বপ্ন বিলাস,
কন্যাশ্রী, অনাদরের এগিয়ে চলার সেই অভিলাষ।
কন্যাশ্রী, কিশোরী মেয়ের এগিয়ে চলার আলোক লতা।
কন্যাশ্রী, শরৎ বাবুর ‘সাধারণ মেয়ে’-র কথকতা।
কন্যাশ্রী, যুগের খাতায় মেয়েবেলার গল্প বলে।
কন্যাশ্রী, লড়াই করে সমুখ পানে এগিয়ে চলে।
কন্যাশ্রী, সচেতনতার বাতিঘর আজ চলার পথে।
কন্যাশ্রী, অভ্রভেদী বিজয় কেতন জীবন রথে।
যে কন্যারা হারিয়ে যেতো অন্ধকারে,
তাঁরা আজ স্কুল কলেজের ক্লাসঘরে।
বাল্যবিবাহ আর নয়, সে বড় অভিশাপ,
কুঁড়িতে বিনাশ করা জেনো মহাপাপ।
কন্যাশ্রী স্বপ্ন দেখার সোনার তরী,
এসো আজ সবাই মিলে শপথ করি।
কন্যাশ্রীরা জীবন যুদ্ধে হোক জয়ী,
অসুর দমনে তাঁরা হোক রনংদেহী।
কন্যাশ্রী দশ হাতে দশ অস্ত্র ধরে,
অশুভ শক্তির সাথে লড়াই করে।
কন্যাশ্রীর বিশ্বজয়ে গর্ব মোদের,
কন্যাশ্রী মার্গদর্শন জীবন বোধের।
কন্যাশ্রীর আলো আজ ঘরে ঘরে,
কন্যারত্ন হয়ে বিরাজ করে।
এসো সেই রত্নদের রক্ষা করি,
কন্যাশ্রীর সুরক্ষিত জীবন গড়ি।
সুমন বিশ্বাস মহাশয়ের কবিতায় কন্যাশ্রীকে এক নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কন্যাশ্রী শুধুমাত্র একটি সরকারি প্রকল্প নয়, এটি একটি নারীর নিজস্ব সত্তা ও ক্ষমতায়নের প্রতীক। কবিতার শুরুতেই তিনি লিখেছেন:
"আমি কন্যাশ্রী, আমি ভাগ্য লিখি নিজের হাতে।
আমি প্রগতি, আমি এগিয়ে চলি সবার সাথে।"
এই লাইনগুলির মাধ্যমে সুমন বিশ্বাস মহাশয় কন্যাশ্রীদের নিজেদের ভাগ্য নির্মাণের শক্তি এবং সাহসের কথা বলেছেন। সমাজে মেয়েদের যে অবহেলা ও পিছিয়ে থাকার সমস্যা ছিল, তার বিরুদ্ধে কন্যাশ্রী প্রকল্প এক দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। প্রকল্পটির মেয়েরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে তুলে নিতে শিখছে, যা একটি বিশাল সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মেয়ে তাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। তারা কেবল শিক্ষাগত উন্নতিই নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় রত। সুমন বিশ্বাসের মহাশয় কবিতার পরবর্তী অংশে তিনি কন্যাশ্রীর এই সাফল্যকে কাব্যিকভাবে বর্ণনা করেছেন:
"কন্যাশ্রী, সচেতনতার বাতিঘর আজ চলার পথে।
কন্যাশ্রী, অভ্রভেদী বিজয় কেতন জীবন রথে।"
এই অংশটি প্রকল্পটির সফলতার প্রতীক হিসেবে দেখা যায়। প্রকল্পটি মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে, যা তাদের জীবন পরিবর্তনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা এখন আর কেবলমাত্র নিজেদের পরিবার ও সমাজের উপর নির্ভরশীল নয়, তারা নিজেরাই নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্প শুধু মাত্র শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, সমাজের বিভিন্ন অন্ধকার দিক যেমন বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন প্রভৃতির বিরুদ্ধে এক দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। সুমন বিশ্বাস মহাশয়ের কবিতায় এর প্রতিফলন পাওয়া যায়:
"যে কন্যারা হারিয়ে যেতো অন্ধকারে,
তাঁরা আজ স্কুল কলেজের ক্লাসঘরে।
বাল্যবিবাহ আর নয়, সে বড় অভিশাপ,
কুঁড়িতে বিনাশ করা জেনো মহাপাপ।"
এই লাইনগুলির মাধ্যমে কবি সমাজের অন্ধকার থেকে মেয়েদের বের করে আনার প্রয়োজনীয়তা ও কন্যাশ্রী প্রকল্পের সেই কাজে ভূমিকা উল্লেখ করেছেন। কন্যাশ্রী প্রকল্প মেয়েদের বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা করে তাদের শিক্ষা ও স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এটি সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান, যা ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েরা তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে অগ্রসর হচ্ছে। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার সাহস পাচ্ছে। সুমন বিশ্বাস মহাশয়ের কবিতার একটি অংশে তিনি কন্যাশ্রীদের এই স্বপ্ন পূরণের পথে নতুন আলোকপাত করেছেন:
"কন্যাশ্রীর বিশ্বজয়ে গর্ব মোদের,
কন্যাশ্রী মার্গদর্শন জীবন বোধের।
কন্যাশ্রীর আলো আজ ঘরে ঘরে,
কন্যারত্ন হয়ে বিরাজ করে।"
এই অংশটি প্রকল্পটির সাফল্য ও এর মাধ্যমে সমাজে মেয়েদের অবস্থানের পরিবর্তনকে কাব্যিকভাবে তুলে ধরেছে। প্রকল্পটি মেয়েদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে, যা তাদের জীবনে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সুমন বিশ্বাস মহাশয়ের কবিতাটি কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন। এটি প্রকল্পটির ইতিবাচক প্রভাব ও সমাজে এর ভূমিকার এক বিশেষ উদযাপন। কবিতাটি পাঠকদেরকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সফলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং সেই সঙ্গে একটি নতুন দিশার সন্ধান দেয়।
কন্যাশ্রী দিবসের প্রাক্কালে, সুমন বিশ্বাস মহাশয়ের এই কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সমাজে মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্পের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই কবিতা কন্যাশ্রী দিবসের উদযাপনকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পটি মূলত মেয়েদের শিক্ষার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। তবে, এর লক্ষ্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, বরং মেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য উৎসাহিত করা।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে, মেয়েদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে, মেয়েদের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ে, মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যের মূলে রয়েছে মেয়েদের শিক্ষার উপর জোর দেওয়া। মেয়েদের শিক্ষা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথও প্রশস্ত করেছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় মেয়েদের জন্য আরো উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা, তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সমাজে তাদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটির সাফল্যের উপর ভিত্তি করে, সরকারের লক্ষ্য হলো সমাজের প্রতিটি মেয়েকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা এবং তাদের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
কন্যাশ্রী প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গের সমাজে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এটি মেয়েদের শিক্ষা ও সচেতনতার পথ সুগম করেছে, তাদের বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা করেছে এবং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ করে দিয়েছে।
সুমন বিশ্বাস মহাশয়ের কবিতাটি এই প্রকল্পের গুরুত্ব ও সাফল্যকে তুলে ধরেছে। কন্যাশ্রী দিবসের প্রাক্কালে, এই কবিতা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েরা নিজেদের জীবনের অধিকারী হয়ে উঠছে এবং তারা একটি নতুন দিগন্তের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের এই সাফল্যকে উদযাপন করতে, আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে এই প্রকল্পের প্রচার ও প্রসার বাড়ানো প্রয়োজন। সমাজের প্রতিটি মেয়েকে শিক্ষিত করা এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। সুমন বিশ্বাস মহাশয়ের কবিতাটি সেই দায়িত্বের কথা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং কন্যাশ্রী দিবসের উদযাপনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে কন্যাশ্রীদের সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি, যেখানে তারা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই লিখবে এবং বিশ্বজয়ের স্বপ্ন পূরণ করবে।