মনসুকা খবর, নিউজ ডেক্স, ২০২৫ : দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হলো। এই বিশেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দিরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির নিদর্শনস্বরূপ তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ লক্ষ ১ টাকা দান করেছেন। এই অর্থ একটি সোনার ঝাড়ু তৈরির জন্য ব্যবহার করা হবে, যা পুরীর ঐতিহ্য মেনে রথযাত্রার সময় জগন্নাথদেবের রথের পথের ধূলি পরিষ্কার করবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই আন্তরিক উদ্যোগ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দিঘার এই জগন্নাথ মন্দিরটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে। রাজস্থানের বেলেপাথর ব্যবহার করে নির্মিত এই মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী পুরীর মন্দিরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্বোধনের পূর্বে দুই দিন ধরে বিভিন্ন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। যজ্ঞ, দেবতাদের দুগ্ধস্নান এবং পুরীর রাজেশ দৈতাপতির তত্ত্বাবধানে মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর সরকারি অনুষ্ঠানে মন্দিরের দ্বার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দিরের নির্মাণশৈলীর প্রশংসা করে বলেন, এই মন্দির আধ্যাত্মিকতা ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটাবে এবং দিঘার পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করবে।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রথা অনুযায়ী, রথযাত্রার পূর্বে সোনার ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়। এই ঐতিহ্য দিঘার মন্দিরেও বজায় রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ৫ লক্ষ ১ টাকা দান করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিবকে এই অর্থের চেক প্রদান করা হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আতাউল হক ইন্দাস এই উদ্যোগের প্রশংসা করে এটিকে মুখ্যমন্ত্রীর "প্রকৃত ভক্তি" বলে উল্লেখ করেছেন।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পুরীর মন্দিরের রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। প্রসাদে স্থানীয় মিষ্টির প্রাধান্য দেওয়া হবে। পুরনো দিঘার জগন্নাথ মন্দির মাসির বাড়ি হিসেবে পরিচিত হবে। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার জন্য তিনটি নতুন রথ তৈরি করা হবে এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় মন্দিরে ধ্বজা উত্তোলনের ব্যবস্থা থাকবে।
মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে দিঘায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলার পুলিশ আধিকারিকদের মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও, একাধিক মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এই মন্দির উদ্বোধনের বিশেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় "নয়ন পথগামী জয় জগন্নাথ স্বামী" শিরোনামে একটি গান রচনা ও সুর করেছেন। পর্যটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন গানটি গেয়েছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পেজে এর মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই বহু মানুষের মন জয় করে নিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, এই মন্দির দিঘার পর্যটন শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ইতিমধ্যেই বহু পর্যটক ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি দিঘায় এসেছেন এবং হোটেলগুলিতে ভিড় দেখা যাচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন তাঁর গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভক্তি প্রকাশ করে, তেমনই দিঘাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার তাঁর প্রশাসনিক পরিকল্পনার পরিচয় বহন করে। ভক্তরা এই উদ্যোগকে মুখ্যমন্ত্রীর জগন্নাথদেবের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে দেখছেন।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন এবং মুখ্যমন্ত্রীর সোনার ঝাড়ুর জন্য অনুদান নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।