প্রদীপ শাসমল: যে প্রজন্মের কাছে ২৪ ঘন্টাটা কম মনে হ'ত, যারা একটু বিশ্রামে জন্য হাহাকার করতো, যারা বাড়িতে সময় না দিতে পারার জন্য আক্ষেপ করতো, যে বাতাস নির্মলতা কী জিনিস ভুলতে বসেছিল, যার নামকরা রেস্টুরেন্ট ছাড়া খাওয়ার গলা দিয়ে নামতো না, তার শৌচকর্ম অন্য কেউ করে দিলে যে খুশি হ'ত, সপ্তাহে ২ বার ফেসিয়াল-টাকিয়াল না করলে যাদের কী একটা যেন অপূর্ণ থেকে যেত, টিউশনিতে মুখ না দেখালে যে মেয়েটার পড়া হাঁটু থেকে মাথায় up হ'ত না..আজ লকডাউন সেগুলো শুধু down করেনি সেগুলোর মুখে lock লাগিয়ে দিয়েছে! মন শুধু গাইছে...ভেঙে মোর ঘরের তালা(Lock) নিয়ে পালা, ওরে কালা!
ভাবতে পারেন... ধর্ষণের হার এক্কেবারে তলানিতে, খুনের হারও তাই! চুরি,ডাকাতির সাথে সাথে পাড়ার বউদির দিকে ঝারি মারাও আজ মরে গেছে অনেকটাই! মিনু বৌদি যে ওই চৌধুরীদের ছোট ছেলের দিকে চেয়ে মুদিত চোখে ঠোঁট কামড়াবে তার উপায়ও নেই, শ্লা ঠোঁটে আবার মাস্ক, নিন্দুকেরা বলেন মাক্স! মঙ্গলপান্ডে,গোপগড়ের পার্ক,ভিক্টোরিয়া,দর্জিপাড়ায় আজ সাময়িক অকাল বৈধব্য! যাদবপুর,JNU তে'হোক' না শুধুই পাখির 'কলরব!"
বনের পশুরা নাকি রাস্তায় বেরিয়ে চলে এসেছে! ময়ূর পেখম তুলে হাঁটছে! এমনিতেই জামার সাইজ ছোট হতে হতে কাঁধ কেটে নিয়ে এদিকের পেখম হারিয়ে গিয়েছিল শুটকির হাতে! তবে যাই বলুন, আজ যদি উনি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতেন তাহলে জঙ্গলে গিয়ে কৃষ্ণসার হরিণ মারতে হ'ত না বা ফুটপাথে গাড়ি উঠিয়ে ঘুমন্ত দোপেয়েদের পিষতে হ'ত না...! উনি হরিণকে দেখে সিওর গাওয়ার সুযোগ পেতেন..."দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার #কারের ওপারে!"
কী বলতে কীসব বলে ফেললাম! আসলে অতিভূজে চলে গেলাম ভূমি থেকে! মানে ওই #ভূজের ভূমিকম্পে প্রবলভাবে পড়ে গেলাম আরকি! না না, এই ভূমিকম্প নিয়ে আমার এখন কম্প দিতে জ্বর আসছে না, আমি তো একটু "চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে" টাইপের মস্তিষ্কের অধিকারী তো...তাই আফটার শক নিয়ে কেত্তন করতে চাইছি!
লকডাউন হ'ল, স্ট্যাট ডাউন হ'ল, ট্রাম্পডাউন হ'ল, কুচুটেরা ইমেজ ডাউন করলো, চকের দাগে ডাউন টু আর্থও হওয়া হ'ল... অন্যদিকে মিষ্টির দোকানের টাইমিংও রাঞ্চোর মেশিনের মতো "আপ & ডাউন,আপ & ডাউন" হতেই থাকলো! এবার দেখা যাক এই লকডাউন উঠে যাওয়ার পর কোন কোন বিষয়ে কী কী আপ ডাউন হয়! মনে রাখতে হবে ৫০% বা ২০ জন যাত্রী নিয়ে আপ & ডাউন তালা খোলার আগেই শুরু হয়ে যাবে!
ওরে ভজা চাবিটা আনরে...!
#অর্থনীতি --
লকডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সে বিষয়ে ফাইটোপথোরা ইনফেসট্যান্স লেগে গেছে আলুর ধ্বসা রোগের মতোই! তবে ভারতে তার আগেই চোরাস্রোত ছিল প্রবলভাবে! এরপর যেটা হবে সেটা থেকে বের হতে বিশ্ব অর্থনীতির কালোঘাম ছুটে যাবে! করোনা মোকাবিলার জন্য প্যাকেজে যা খরচ, তারজন্য অর্থনীতি ভেঙে পড়বেনা.. ভাঙবে এই পিরিয়ডে কাজকর্ম স্তব্ধ হওয়ার জন্য। কলকারাখানা,নির্মান শিল্প, সফটওয়্যার কোম্পানি সব প্রায় বন্ধ। বন্ধ ট্যুরিজম, স্কুল, কলেজ, ট্রেন, বাস, অটো,বেশিরভাগ দোকান,হকারি,প্রাইভেট টুইশন,চুরি,ছিনতাই..সব কিছু! ফলে সাধারণের হাতে টাকা নেই। যাদের টাকা ছিল তাদেরও বরফ গলবেই। এদিকে ব্যাঙ্কের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। লোন নেওয়ার লোক কোথায়? টাকা খাটাবে কেমন করে? একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই: যে এসবিআই কয়েকদিন আগে পর্যন্ত বিনা ডকুমেন্টসে ৫ লাখ পার্সোনাল লোনের অফার দিচ্ছিল সে হঠাৎই ৮ লাখের অফার দিয়ে মুহুর্মুহু ম্যাসেজ করছে!
সরকারী কোষাগারের অবস্থাও খারাপ হবে। তবে ভারত সরকার যা সাহায্য পেয়েছে আর পেট্রল,ডিজেলের দাম না কমিয়ে,বেতন কেটে যেভাবে এগোচ্ছে তাতে কিছুটা রিকভারি হলেও বিভিন্ন ট্যাক্স না পাওয়ার জন্য কতটা কী হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে! এটা থেকে বেরিয়ে আসাটা ব্যক্তি,অফিস,ব্যাঙ্ক,সরকার.. সবার কাছেই চ্যালেঞ্জ!
#রুটিরুজি....
কলকারাখানা,দোকানপাট সবই তো বন্ধ। রুটিরুজির টান পড়ছে,পড়বেও! পূজো,ঈদের আগে পোশাকের ব্যবসায়ী, কারিগর, কর্মচারীরা যে কাজে সারাবছরের রসদ পেয়ে যেত তা আজ বন্ধের মুখে। খুলতে খুলতে ঈদ শেষ, যারা বাড়ি গেছে তারাই বা ফিরবে কী করে! তাছাড়া হাতে টাকা না থাকার জন্য কেনাকাটার ধূম লেগে যাবে, এমন আশা করাটাই বাড়াবাড়ি! এদিকে এতদিন ভিনরাজ্যে শ্রমিকরা ছিলেন কাজ ছাড়াই, তারা বাড়ি ফেরার পরই শুরু কলকারাখানা খোলার নির্দেশ এসেছে..ফলে গভীর সমস্যায় তারা।
এদিকে একটা বড় ব্যবসা চৈত্রসেলের সাথে যুক্ত থাকে। বউদি,মামণিরা ভিড় জমিয়ে দেয়। সেসবও আজ উধাও! যে দোকানদারের নিজের স্থায়ী দোকানের সামনের ফুটপাথে শুধুমাত্র চৈত্রসেলের জন্য পসরা সাজাতেন সেইসব অবিক্রিত পোশাকআশাক সুন্দর মোড়কে বেশি দামে আপনার পূজোর পোশাক হতে যাচ্ছে কিন্তু!
যারা দিন আনে দিন খায়, এই লকডাউনে যাদের দোকান খোলার জো নেই, কাজের সুযোগ নেই তাদের অনেকেই কিন্তু বিকল্প কাজের জন্য কেউ সব্জি, কেউ বা মুড়ি,মাছ, স্যানিটাইজার,মাস্ক নিয়ে রাস্তার ধারে বসে পড়ছেন। কেউ আবার তাদের কাজ বন্ধের জন্য বাড়িতে রান্না করে হোম ডেলিভারির ব্যবসাও ফেঁদেছে!
আসলে রেশনের ব্যবস্থায় পেট কিছুটা ভরলেও হাতে টাকার খুব দরকার আর দরকার নিজের রোজগারের পায়ের তলার মাটি শক্ত করা! তাই অনেকেই পেশা বদলাতে পারেন!
যারা কম পুঁজির ক্ষুদ্র শিল্প, হাতের কাজের উপর নির্ভরের শিল্প চালনা করতো তারা কিন্তু অনেকেই পুঁজির অভাবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেনই! মহাজনের কাছে টাকা নিয়ে কাজ বন্ধের জন্য সুদ গুনতে হবে অথচ রোজগার বন্ধ!
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ফেসিয়াল-টাকিয়াল ইন্ডাস্ট্রি! অর্থাৎ সেলুন,পার্লার, স্পা গুলো। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিংয়ের জন্য এখানে "ডোন্ট টাচ মি" গেয়ে কাজ করা সম্ভব নয়! অনুষ্কারা যদি আরও ২-৪ বার মাথায় ভালোবাসা দেখায় তো তাহলে আর কথাই নেই! আর যা ন্যাড়া হওয়ার ধূম উঠেছে তাতে ধূম-৪ কিছুটা সফল হলেই সেলুনের কিছু তো ক্ষতি অবশ্যই!
লকডাউনের জন্য বাড়ির কাজের লোকেদেরও সমস্যা বাড়বে। সবাই তো আর রাজ চক্রবর্তীদের (ইউটিউবে ভিডিও আছে)মতো বাড়িতে বারমাস্যা কাজের লোক রাখতে পারবেন না! তাই বেশিরভাগেদেরই নিজের হাতে আনাজ কাটা, রান্নাবান্না,এঁটো বাসন মাজা,ঘর-বাথরুম পরিষ্কার সব নিজেদের হাতে করতে হয়েছে। এমনিতেই আয় কমেছে..সবাই তো আর সরকারী চাকুরীজীবী বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসায়ী নয়, তাই যাদের হাফ,কোয়ার্টার দরকারের জন্য কাজের লোক ছিল তাদের ক্ষেত্রে এই কয়েকদিনের অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ কাজের লোক ছাঁটাই করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা! আবার ডাক্তার, নার্স..যারা এইসময় নিযুক্ত ছিলেন বেশকিছুদিন তাদের বাড়িতে কাজের লোকেরা কাজ করতে যাবে কিনা সন্দেহ আছে!
#কর্মসংস্থান...
অর্থনীতির পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কর্মসংস্থানের। বেকারত্ব বাড়বে অনেকটাই। ভারতের সফটওয়্যার কোম্পানি গুলোর বেশিরভাগেরই ব্যবসা আমেরিকা বেসড কোম্পানির জন্য, আজ তাদের ঝাঁপ বন্ধ! ফলে অনেকেই কাজ হারাবে।
কাজ হারাবে বিভিন্ন ঠিকা শ্রমিক,অস্থায়ী কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো নয়। আসলে এই মন্দা অর্থনীতির পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংস্থা কর্মী সংকোচনের হাঁটবে স্বাভাবিকভাবেই। তাতে এদের উপরেই কোপটা পড়বে সহজে ও প্রাথমিকভাবে।
শুধু তাই নয়, যারা স্থায়ী তাদের উপরেও খাড়া নেমে আসবে। নতুন রিক্রুটমেন্ট ভাঁড় মে! স্পাইসজেট তো কর্মীদের এই ২ মাসের বেতন দিচ্ছেনা যারা কাজ করেছে তাদের শুধু ঘন্টা হিসেবে দিচ্ছে! এদিকে বেতন না কাটার কেন্দ্রের নির্দেশিকা সুপ্রিমকোর্ট বহাল রাখলেও তা রূপায়িত করা কিন্তু এককথায় অসম্ভব!
যেখানে সরকারী কর্মচারীদের বেতন কাটা হচ্ছে, ডিএ রদ করা হচ্ছে আর এগুলোর চেয়েও বেশি পরিমাণে থাকা টিএ কাটা হচ্ছে তাতে সরকারী ক্ষেত্রেও বেশ কিছুদিন বেশিরভাগ বিভাগে নিয়োগ বন্ধ থাকবেই। বিদেশ ভ্রমণের উপরে রাশ টানা হয়েছে। আবার এ রাজ্য তো নোটিশ দিয়ে পরবর্তী নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত রিক্রুটমেন্ট বন্ধ রাখার কথা বলেছে। আবার যেগুলো চালু আছে সেগুলো আপাতত বিশবাঁও জলে। সরকারী চাকরী মুখাপেক্ষীদের জন্য আপাতত কিছু মাসের নির্জলা উপবাস চাকরীতে! PSCWB কিছু রেজাল্ট বের করলেও UPSC সিভিল সার্ভিসেসের প্রিলিমস পিছিয়ে দিয়েছে! এমন অবস্থা যে ২০২১ এর ভোটের আগে চাকরীতে জোয়ার এনে ভোট বাক্সে ভরা কোটালের প্রিলিউড বাজানোটাও মিউট হতে পারে!
বিভিন্ন কোম্পানি আজ অফার লেটার ফিরিয়ে নিচ্ছে। দেশের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস ইন্টার্ভিউয়ের মাধ্যমে চাকরীর অফার পাওয়া স্টুডেন্টরা আজ অথৈ জলে! তাই চাকরীপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ কিছুদিনের জন্য ধূসর পান্ডুলিপিতে লিপিবদ্ধ হতে যাচ্ছে!
এই মন্দার বাজারে অদূর ভবিষ্যতে কতগুলো স্টার্ট আপ কোম্পানি আপে যাবে নাকি আপরুটেড হবে তা নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়, ফলে ঘোর কলি! আবার বিদেশী কোম্পানি গ্রাস করার জন্য শকুনের মতো চেয়ে আছে!
তবে চিন থেকে যা পাততাড়ি গোটানো শুরু করেছে বিভিন্ন কোম্পানি তাতে ভারত আশাবাদী হতেই পারে!
#ওয়ার্ক_ফ্রম_হোম....
এমনিতেই অফিসের বস এমন অ্যাসাইমনেন্ট দিতেন যে অফিসের টাইম ছাড়াও বাড়িতে বউবাচ্চাকে সময় না দিয়ে বাড়িতে কাজ করে তা কমপ্লিট করতে হ'ত! ছুটিতেও রেহাই নেই! এখন সেটা তো শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত! শুধু তো বেসরকারি নয় সরকারী ক্ষেত্রেও সেটা ব্যতিক্রমী নয়! লকডাউনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরকারী ক্ষেত্রে এই ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রবাবিলিটি কমলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে সেটা যে অনেকটাই বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই!
যে এতদিন বাড়িতে কাজ করাটা পাশ কাটিয়ে নিত কিন্তু এখন বেতন কাটার ভয়ে সে বিষয়ে সড়গড় হয়েছে সে কিন্তু আর ফাঁকি দিতে পারবেনা!
#শিক্ষা_ও_গবেষণা....
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আজ বন্ধ। লকডাউনের পর সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেনে কতটা কী দ্রুত করা যাবে সেটায় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে! এমনিতেই পঠনপাঠন বন্ধ, পরীক্ষা স্থগিত, স্থগিত রেজাল্টও! আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গিয়ে প্রাইভেটে যেটা হ'ত আজ সেই অপশনের মুখেও লক! স্টুডেন্টরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটাই! শিক্ষাবর্ষকে নতুনভাবে সজ্জিত করতে হবে, লকডাউনের পর খাতা দেখা,রেজাল্ট তৈরি করতে কালোঘাম ছুটে যাবে!
বার্ষিক পরীক্ষা তো বাতিলই বোর্ডের পরীক্ষাও বাতিত (CBSE 10, উত্তরপূর্ব দিল্লী ছাড়া), আবার বোর্ডের বাকী পরীক্ষা পরে হবে! ভাবুন তো সেই অজয় রাতরার ওয়েস্ট ইন্ডিজে সেঞ্চুরি করার কথা! ৯০ এর ঘরে সারারাত জেগে! এবারের উচ্চমাধ্যমিক সহ বোর্ডের অনেক পরীক্ষার দশা এরকমই! আর এরাই সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে!
বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হবে এন্ট্রান্সে বসবে এমন স্টুডেন্টরা। WBJEE ছাড়া আর কোন এন্ট্রান্সই সম্পন্ন হয়নি। পরীক্ষার আগে যেখানে লাগাতার মকটেস্ট হয়, যাদের অনলাইনে সুবিধা নেই তাদের খুব ক্ষতি! তবে সবার সাথে বসে পরীক্ষা দেওয়া আর বাড়িতে নিজে নিজে দেওয়া এক কথা নয়! তাছাড়া, যারা DLP কোচিং নেয় তাদের কাছে মেটেরিয়াল আসাটা চাপ! তবে এটাও ঠিক ১০+২ এর অসমাপ্ত পরীক্ষার অভিশপ্ত স্টুডেন্টদের থেকে repeater রা অ্যাডভান্টেজে আছে! এমনিতেই ওরা মে মাসের বদলে JEE মেইন দেবে ১৯ থেকে ২৩ শে জুলাই আর নিট দেবে ২৬ শে জুলাই। অ্যাডভান্সড হবে আগস্টে! তাই ওরা অঢেল সময় পেয়েছে! কিন্তু ১০+২ পরীক্ষার্থীরা এই সময়টা কাজে লাগাতে পারছেনা! অথচ বোর্ডের পরীক্ষা আগে শেষ হয়ে গেলে এরাও অ্যাডভান্টেজ পেত!
তবে অনলাইন ক্লাসের হুজুগ বেড়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের বন্দোবস্ত করেছে। কিন্তু গ্রামের দিকে তার সুবিধা পাওয়াটা সোনার পাথরবাটি! আর ক্লাসরুমের বিকল্প কিছু হতে পারেনা। তবে নেইমামার চেয়ে কানা মামা ভালো! আর যাইহোক "বাংলার শিক্ষা ক্লাসরুম"-এর মতো ক্লাসমামার কোন প্রয়োজন নেই! অনক টিচার তো বসে বসেই ক্লাস নিচ্ছেন, বোর্ড ওয়ার্কে প্রবল অনীহা,বোর্ড ব্যবহারেও হারাকিরি! দেখেশুনে মনে হচ্ছে স্কুলে ৫০% যদি এরকম টিচার থাকেন তাহলে শিক্ষাব্যবস্থা লাটে উঠতে কতক্ষণ! এগুলোই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে টিচার নিয়োগে প্রফেশনাল ট্রেনিং, ডেমো, ইন্টার্ভিউ এর গুরুত্ব কতখানি!
যাইহোক এই লকডাউনের ফলে অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মোবাইল,নেট সার্ফিংয়ের প্রবণতা বাড়াবে পড়ার ছুতোয় বা সত্যিকারের প্রয়োজনে। আর অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব ও প্রসার বেড়ে যাবে। এই সুযোগে আন অ্যাকাডেমি, বাইজু,বেদান্তদের ব্যবসার আর অন্ত থাকবে না! শুধু তাই নয় ব্যক্তিগত উদ্যোগেও এর প্রসার বাড়বে! তাছাড়া টাইম নষ্ট করে অনেক পথ পেরিয়ে পড়তে ও পড়াতে যাওয়ার দারুণ বিকল্প হবে এই অনলাইন ক্লাস!
বেসরকারি স্কুলগুলোতে সামর্থ্যবান অভিভাবক/অভিভাবিকারা পর্যন্ত ফিজ কমানোর জন্য নাকিকান্না করছেন! ফলত এইসব স্কুলের টিচারদের বেতন কমানপ হয়েছে অনেকক্ষেত্রেই! আবার যারা পার্মানেন্ট নন তাদের যে কী হাল হবে বোঝাই যাচ্ছে! এক্ষেত্রেও অনেক টিচার অনলাইন ক্লাস নিয়েছেন, হোয়াটস অ্যাপে গ্রুপ বানিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে যাচ্ছেন! এরপর এই প্রবণতা আরও বাড়বে। এমনিতেই অনেক বেসরকারি স্কুলের টিচাররা স্টুডেন্টদের সঙ্গে নিয়ে এটা করে থাকেন। এর ফলে টিচারদের প্রাইভেটের পসার বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা!
প্রাইভেট টিউশনের কথা যখন উঠলো তখন প্রাইভেটটিউটরদের দুর্দশা দেখেছি এই লকডাউনে! শখের, সামর্থ্যবান,তেলা মাথায় তেল ছাড়াও সত্যিকারের এর উপর নির্ভরশীল প্রচুর প্রাইভেটটিউটর আছেন যাদের অন্নসংস্থান হয় এই টিউশন পড়িয়ে! এতদিন পড়ানো সম্ভব হয়নি বলে তাদের পকেটে টাকা আসেনি অন্যদিকে এতদিন তাদের কাছে না পড়ে অনেকেই নিজেরা পড়ে যদি কোন পার্থক্য না উপলব্ধি করে তাহলে অনেকেই যে প্রাইভেটটিউটর ছাড়িয়ে দেবে তা বলাই বাহুল্য! তবে স্কুলটিচারদের ক্ষতি খুব একটা হভে বলে মনে হয়না! তবে একটা কথা বলতে পারি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলোতে পড়ানো জন্য অভিযোজন করাটা ভিষণ দরকারি! তবে কোন অজুহাতে পড়াতে যেতে না পারলে অনলাইনে যে সেই ক্লাসটা পড়ানোর চাপ আসবে তা কিছুক্ষেত্রে বলাই যায়!
এই লকডাউনে একটা জিনিস দেখে খুব ভালো লাগছে, সেটা হ'ল টিচারদের ইউটিউব ভিডিও। এতদিন ইউটিউব খুললে বগলকাটা নাইটির বউদিদের ভিডিওর ভিড়ে বাকীসব হারিয়ে যেত,এখন সেখানে টিউটোরিয়াল ভিডিওর ভিড় বেশ সন্তোষজনক! এই যে অভ্যাস শুরু হয়েছে তার রেশ ভবিষ্যতেও পড়বে!
তবে গবেষণা খাতে খরচ কমলে গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটবে! ওদিকে ফেলোশিপে ব্যয় সংকোচিত হলে, সেই একই ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে!
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্টুডেন্টদের বাকীসব সরঞ্জামের মতো প্রতিষ্ঠানের লোগো লাগানো মাস্ক আর পোগো লাগানো স্যানিটাইজার না কিনতে হয়!
#দ্রব্যমূল্য..
লকডাউনের শুরুতে যা দাম ছিল জিনিসপত্রের এখন তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আসলে হঠাৎ চাহিদা বৃদ্ধি ও কম যোগানের জন্য এমনটা হয়েছিল! পরে যোগানের সাথে সাথে মানুষের হাতে টাকা বাড়ন্ত বলে ভিড় কমের জন্য দাম আপাতত নিয়ন্ত্রণে! তবে লকডাউনের পর আবারও সব চাহিদা বাড়বে কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া বাকীসব জিনিসের উৎপাদন তেমনভাবে শুরু হবেনা বলে আবারও দাম বাড়তে পারে!
জমি, জায়গা,ফ্ল্যাটের বিক্রি কমবে ফলে দামও কমতে পারর এসবের! সেইসাথে লোন পাওয়া সহজ হবে এবছর! তাই এইসবে ইনভেস্ট করার জন্য এবছর হবে সেরা বছর!
সোনার দাম বাড়বে অনেক,তাই বউকে খুশি করা চাপ হয়ে যাবে!
#হুড়োহুড়ি...
লকডাউন শেষ হলে ব্যাঙ্ক,অফিস,আদালতে বকেয়া কাজের জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে! সেটা সামাল দিতে গিয়ে কর্মীদের দফারফা হয়ে যাবে আর ওদিকে মানুষও অস্থির হয়ে উঠবে!
করোনা মোকাবিলার জন্য এত মানত হয়েছে যে আর নিজেদের এতদিনের যা মানত বাকী আছে লকডাউন শেষ হলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হুড়োহুড়ি লেগে আবে সেগুলো মেটাতে!
"বিপিন বাবুর কারন সুধা"--দেখলেন তো মানুষ কত তৃষ্ণার্ত ছিল! দাদা,কাকার সাথে বৌদি,মামণিরাও! তাই এতদিন ঘরের খাওয়ার খেয়ে খেয়ে যাদের মন পচে গেছে তারা এবার পেটটা পচানোর জন্য লকডাউনের শেষে হোটেল,রেস্তোরাঁয় ভিড়টা কেমন করবেন দেখে নেবেন! এতদিনের লস রেস্তোরাঁও ঠিক পুষিয়ে নেবে ভাগাড় দিয়ে,আর এতদিনের নষ্ট হওয়া মশলাপাতি দিয়ে! এলিটরা তাই সাবধান! আবার বাড়ির স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস ভেঙে ভাগাড় খেলে সকালে প্যান ডি আর রাতে ইনো এনে দিই না করতে হয়!
ভিড় বাড়বে শহরের পার্ক,ওয়াটারপার্ক গুলোতে,চিড়িয়াখানায়! বেড়াতে যাওয়ার ধূম লেগে যাবে! এতদিনের গুমরে মরা প্রেম গুলো ভিক্টোরিয়ায় ছাতা ঢাকা ছাড়াই বিস্ফোরণে শীৎকার করবে!
যাদের বাইরে ছোঁকছোঁক করা অভ্যাস তারা দেখবেন আড়ালের স্পা, হোটেলের রুমে মধূ খেতে ভিড় জমাবে বেশি করে! শোভাবাজারে প্রথম কয়েকদিন পুলিশকে ব্যারিকেড না করতে হয়!
এগরার বিয়ে বাড়ির বাই তো দেখেছেন, এরপর লকডাউন উঠলে ওভারটাইম করেও ব্রহ্মা তার অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করতে পারবে কিনা সন্দেহ!
সবথেকে খারাপ অবস্থা হবে কাজে যোগ দেওয়ার দিন বাস /ট্রেন ধরাতে। ফ্লাইট,ট্রেন বুকিংয়ে মারাত্মক চাপ থাকবে বেশ কয়েকদিন!
#খেলাধুলো_ও_বিনোদন...
লকডাউন শেষে এটা হবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়! এমনিতেই অলিম্পিক পিছিয়ে ২০২১, টি-২০ বিশ্বকাপও বিশবাঁও জলে! বাকী আইপিএল,চাম্পিয়ন্স লিগ,দেশের ফুটবল লিগ গুলো, বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব ইত্যাদি কীভাবে সংঘটিত করা হবে সেটাই কোটিটাকার প্রশ্ন! ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রক তো বলে দিয়েছে যে সেপ্টেম্বরের আগে দেশে কোন খেলাধুলো নয় তাই ক্রীড়াপ্রেমী মানুষেরা কীভাবে কাটাবেন সেটাই ভাবাচ্ছে!
সেইসাথে বন্দী অবস্থা উঠে গেলে খেলার জন্য ময়দানের বৈধব্য কেটে ময়দান যে সধবায় রাঙা হবে সেটাই মুক্ত হাওয়ার ন্যায় ফুরফুরে করে দেবে! তবে এতদিন পড়ে থাকা মাঠ,পিচ,ট্র্যাক ঠিক করতে মালী, কিউরেটরদের প্রচুর খাটতে হবে কিন্তু!
অনেক সিনেমার শ্যুটিং মাঝপথে থমকে,অনেকগুলো আবার মন্দার বাজারে বাজেটে জেটল্যাগে বিধ্বস্ত.. তাই ঈদের বাজার তো গেলই, পূজো, দীপাবলি মায় বড়দিনেও ভালো সিনেমা এইবছর কতগুলো আসবে তা নিয়ে সংশয় আছে! ফলে খোরাকের অভাব তো হবেই!
সিরিয়ালগুলো বন্ধ, মা-মাসী-পিসিদের বেজায় মুখভার! নতুন করে রিচার্জ করার দরকার নেই। লকডাউন পিরিয়ডে নাকি এ রাজ্যের ৪০% মানুষ কেবল টিভি রিচার্জ করাননি! তবে চিন্তা নেই,নতুন এপিসোড আসা শুরু হলে না খেতে পেলেও উপেনের বউ ঠিক বলবে, "ওটা দিতে হবে!" সেইসাথে আপনার খেলা দেখা, সিনেমা দেখা আগের চেয়ে আরও গেল!
পর্ণ ওয়েবসাইট গুলো এমনিতেই ফ্রি করে দিয়েছিল এরপর সেই চকচকে জিনিসে চার্জ বসালে কতজনই বা মোহ কাটাতে পারবে!
তবে মিছিল, মিটিং,ধর্মীয় জমায়েতগুলো রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে!
খেলা,পুরষ্কার সভা যাইই হোক না কেন..পুরষ্কারের অর্থমূল্য এবছর কমে যেতে পারে!
#উৎসব_পূজো...
ঐতিহ্যশালী দুর্গাপূজা, কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা এবছর স্পন্সরের অভাবে জৌলুস হারাতে বাধ্য! ফলে কল্লোলিনী তিলোত্তমা সহ পুরো বাংলা উৎসবে দৈন্যতায় ভুগবে! সামর্থ্য থাকলেও আশা করবো তারা সামাজিক কাজে টাকাগুলো ব্যবহার করবে বাজেট কমিয়ে!
তবে এটা সিওর যে, পূজোতে #করোনা একটা হট থিম হতে যাচ্ছে! যে দেশে করোনা পকোড়া হয়,সে দেশে এটা আবার বিচিত্র কী!
#পরিবেশ....
যানবাহন,কলকারাখানা বন্ধ থাকার দরুন দূষণের মাত্রা কমে গেছে এক লাফেই! মানুষ প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারছে, রাস্তায় বন্যপশুরা খেলছে, শীতের আগেই পরিযায়ী পাখির আনাগোনা শুরু! তাপমাত্রাও কমেছে, কমেছে ভ্যাপসা ভাবও! এমনিতেই এবছর মার্চের শুরুতেও হাল্কা ঠান্ডা ছিল, তাই এবছর শীত বাড়ার চান্স বেশি। আশা করা যায় এবছরের ঋতুচক্র অনিয়মিত হবেনা!
#স্বাস্থ্য...
দূষণের মাত্রা কম, বাইরে যেতে হচ্ছেনা,বাইরের খাওয়ার খেতে হচ্ছেনা, তাপমাত্রা কম..ফলে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কম! আবার লোকে ডাক্তার দেখাতেও যাচ্ছেন কম। তবে লকডাউন শেষে টাকার অভাব ও এই প্রবণতার জন্য অনেকেই ডাক্তার দেখাতে অবহেলা করবেন! সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে পরিবেশে দূষণ বাড়বে,কাজের চাপ বাড়বে! তাই এই প্রবণতা বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে!
এটা ঠিক যে সরকারী হাসপাতাল গুলো আস্থা ফেরাতে পেরেছে অনেকটাই কিন্তু এই কোভিড-ডেডিকেটেড স্ট্রাইকচার ভেঙে পুরোপুরিভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগবে! ফলে ভিড় বাড়বে অনেকটাই!
করোনার ভ্যাকসিন যারা আবিষ্কার করবে সেইসব ঔষধ কোম্পানিগুলোর আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাবে!
#চুরি_ছিনতাই...
লকডাইনে চুরি,ছিনতাই, ডাকাতি করার উপায় ছিলনা এতদিন! কারুর হাতেই আজ টাকা নেই, আর এইসব শিল্পীরা তো আরও বেশি সমস্যায়! লকডাউন উঠে গেলে এর মাত্রা মাত্রাছাড়া হয়ে উঠতে পারে! ভাবতে পারেন পলতার সেই ছেলের মুক্তিপণ ছিল সাড়ে তিন লাখ,ইন্টিজার না! তাই যা পাবে তাইই খাবে! রাস্তায়,ভিড়ে, দরজার আড়ালে, সিন্ডিকেটে.. তাই সাবধান সুধীমহল! ঠগ, জোচ্চোরের সংখ্যাও বেড়ে যাবে!
তবে উন্নয়নের তোড়জোড় শুরু হওয়াটা স্বাভাবিক! কিন্তু টাকা কোথায়? এমপি ল্যাড স্থগিত! যাইহোক যতটুকু আছে তা দিয়ে তোড়জোড় ও তা থেকে কাটজোড় শুরু হবে!
বাজারে জালনোটের জোগান না বেড়ে যায়!
#ডিভোর্স....
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে এক ছাদের তলায় থাকার জন্য সম্পর্কগুলো দৃঢ় হবে বেশি করে! কিন্তু বাস্তবে তা নয়! গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা যায় কি? বরং হিতে বিপরীত হবে! বাড়িতে সবসময় থাকার জন্য অনেকের কাকের বাসা-কোকিল ডিমের থিওরি বন্ধ,বন্ধ ফোনে ফোনে ফেরোমেন। সেইসাথে ঝগড়া, জোর করে মুখ বুঝে সহ্য করা। অনেকের সমস্যা চরমে উঠবে,ধরা পড়বে কিছু অবৈধ 69! ফলে চিনের মতো ডিভোর্স ফাইলের মাত্রা বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা!
#সামাজিকতা...
করোনা মোকাবিলার মোক্ষম দাওয়াই ছিল মুন্না-লকডাউন ও সার্কিট-সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং! যদিও একে ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং বললে ভালো হ'ত! ভবিষ্যতেও সামাজিক দূরত্ব বহাল থাকবে কিন্তু সেটা সময়ই বলবে তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পরের কিছুদিন মানুষের মধ্যে ভীতি, সন্দেহটা থেকেই যাবে! ফলে সবকিছু সহজভাবে হবেনা! মেলামেশা সহজাত হবেনা বেশ কিছুদিন!
মাস্ক,স্যানিটাইজারের সাথে সাথে "সরে দাঁড়ান" ও চলতে থাকবে!
যে ২ কামরার বাড়ি বা ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতো সে নাকি আজ ১ কামরার ফ্ল্যাট খুঁজছে! ফলে সামাজিকভাবে অপসারী হওয়ায় লাগাম লাগবে!
যারা বিদেশে থাকে তাদের দেশে আসার ধূম লেগে যাবে কিন্তু প্রথম প্রথম কলার তোলা স্তিমিত থাকবে!
যাদের বাড়ির লোক বাইরে থেকে এসেছে বলে বা ডাক্তার -নার্সদের সাথে যারা খুব খারাপ ব্যবহার করেছে, বয়কট থেকে শুরু করে ঘরছাড়া পর্যন্ত করেছে.. সেই করোনার ক্ষত শুকিয়ে গেলেও সেই দাগ থেকে যাবে!
"মানুষ আজ বড় অসহায়, তুমি মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াও'-- এই কথাটা আজ কতটা প্রাসঙ্গিক তা ডাক্তার,নার্স,স্বাস্থ্যকর্মী,পুলিশ থেকে শুরু করে পাড়ার ছেলেরা প্রমাণ করে দিয়েছে! আশাকরি ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে!
এই মহামারীর করালগ্রাস থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আমরা আবার স্বাভাবিক হতে পারবো ততই মঙ্গল। মানুষের বন্দীদশা মিটে গিয়ে আবার যেদিন মানুষ রাস্তায় বেরোবে সেদিন আবার পৃথিবী কথা বলবে! মানুষ পাবে মুক্তির আস্বাদ আর পৃথিবী মুক্তি পাবে স্থবিরতা থেকে! তবে একটা নির্দিষ্ট দিন বলে সেদিন থেকে মুক্ত বলে তো আর বলা যাবেনা, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে! লকডাউন উঠে গেলেও নিয়ম মেনে চলা উচিত!
করোনাকে প্রকৃতির প্রতিশোধ না বলে করোনার বিরুদ্ধে মোকাবিলাকে না হয় আমাদের শক্তিপরীক্ষার মহড়া আর করোনা জয়কে না হয় যুদ্ধ জয় বলি! আশাকরি খুব শিগগির করোনা মুক্ত হবে পৃথিবী। এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা গুলোকে না হয় তুলে রাখি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, গল্প দাদুর আসরে সত্যি ভুতের থুড়ি সত্যি ভাইরাসের গল্প নিয়ে! ভজাও তার বুকের লজঝড়ে টাইপ মেশিন বিগড়ে যাওয়ার সময় একবার হলেও মনে করবে, করোনা সত্যিই ঘটেছিল তার জীবদ্দশায়!
লেখক - প্রদীপ শাসমল, ০৬/০৫/২০২০
Tags
Other