শ্যামল রং, "মনসুকা খবর" মনসুকা: কার্তিক মাসে হিন্দু সমাজের যে সকল রেওয়াজ ছিল। ইদানিং কালে তার কিছু কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বা একে বারে কমে গিয়েছে। গত দশ থেকে কুড়ি বছরে মধ্যে এই রকমের বহু কালচার ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে । হিন্দু সম্প্রদায়ের যে পাঁচটা কালচার অবলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে বা হয়ে গেছে সে গুলো হলো-
১) স্বর্গে বাতি দেওয়া: একটা কথা আছে নাতি স্বর্গে দেবে বাতি । এ সুধুমাত্র কথার কথা নয় বা বংশের ধারাবাহিক রাখার জন্য শুধু পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের প্রচলিত প্রবাদ তা নয় সত্যি সত্যি স্বর্গে বাতি দেওয়ার প্রচলন ছিল। দাদু ঠাকুর মারা গেলে তার নাতি লম্বা বাঁশের মাথায় লন্ঠন জ্বালিয়ে টাঙিয়ে রাখা হতো। একটা লম্বা বাঁশ পুঁতে রাখা হতো যেভাবে আমরা স্বাধীনতা পতাকা তুলি সেই ভাবে দড়ির সাহায্য বাঁশের মাথায় লন্ঠন তোলা হত। এই কালচার অবলুপ্তি হয়ে গেছে। এই বাতি দেওয়ার কাজ চলত সারা কার্তিক মাস ধরে।
২) পাটকাঠির ধোঁধল পুড়ানো: কার্তিকের অমাবস্যার কালীপূজার দিন বাজি পোড়ানোর সাথে সাথে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে পাট কাঠির ধোঁধল পোড়ানোর রেওয়াজ ছিল। একে ধারেমশা বলে। ইদানিং কালে তা আর লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত দশ বছরে মধ্যে এই রকমের বহু কালচার ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। লম্বা ডগার পাঠ কাঠি পাট দড়ি দিয়ে বেঁধে ধোঁধল বানানো হতো। সাত কাঠির ধোঁধল ও নয় কাঠির ধোঁধল বানানো হতো। বাড়ির বড়রা ছোটদের জন্য বানিয়ে দিতেন। কালি পুজোর দিন থেকে দুই তিন দিন ধরে পটকা বাজির সাথে ধোঁধল পুড়ানো হত। ধোঁধল পুড়ানো সাথে সাথে ছড়া কাটাও চলত ছোটদের মুখে মুখে - ধারে মশা ধারে/ নীল বনকে যা রে/ নীলে তোর বাসা/মারব কোদাল টাসা....। আলোর উৎসবে পাটকাঠির ধোঁধল পুড়িয়ে আলো উৎসব হতো।
৩) সহরায়: সহরায় শব্দটি এসেছে ‘সহরাও’ থেকে। যার অর্থ সম্বর্ধনা বা প্রশংসা। গো-মহিষাদির প্রশংসা করে আগামী ফসলের সম্ভাবনায় আনন্দ-উৎসব। গরুর চাঁদবাদানি । একই সাথে দেওয়ালে আলপনা দেওয়া । দেওয়ালে আলপনা দেওয়ার প্রচলন নেই বললেই চলে।
৪) কুলকুলতি পুজা: হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু উপজাতি আছে যাদের ছোট ছোট মেয়েরা এই কুলকুলতি পুজা করে থাকে এই কার্তিক মাসে। ১২ বছর হওয়ার আগে পর্যন্ত এই ছোট ছোট মেয়েরা এই পুজো করে। বাড়ির তুলসী মন্দির কাছে একটি গর্ত খোলা হয়। সন্ধ্যায় গর্তের চারপাশে ফুল সাজানো হয়। পুজো করার জন্য প্রতিদিন ঘট ডুবিয়ে জল আনা হয়। তাতে তারা মন্ত্র পড়ে (ছড়া কাটে) "কুলকুলতি কুলের বাতি সন্ধ্যা দাও গো সরস্বতি যত আছে দেবগন তত আছে নারায়ণ"। পুজোর সময় বলে "শাঁখে জল দিয়ে বাজিয়েছি শঙ্খধ্বনি , বিদায় করো গো মা মহারানী।" ভালো স্বামী (শিবের মতো) পাওয়ার জন্য মেয়েরা পুজোর করে। এই পুজোর প্রচলন ধীরে ধীরে কমছে।
৫) বেড়ানাম গান: বেড়া নাম গান বলতে বোঝায় বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ঘুরে হরিনাম গান করা। কার্তিক মাসে সব দিন ঘুরে ঘুরে হরিনাম গান করা হতো । প্রায় প্রতিদিনই ৪-৫ দল বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতেন। এখনও এই নাম গান করা হয় তবে কমে গিয়েছে ।