অনুগল্প "ভালো থেকো"

“ এখানে দুটো প্লেটে দুটো এগরোল , আর কিছু না ” —ওয়েটারকে অর্ডার দিয়ে দীপক রুমাকে বলল— “ তুমি আর কিছু নেবে ? ” রুমা দুদিকে ঘাড় নাড়ল । দীপকের বয়স ত্রিশের কাছাকাছি ।


সম্প্রতি ব্যাঙ্কের প্রবেশনারি অফিসার পদে নিযুক্ত হয়েছে । ওর বাবার বন্ধু মানে অমলকাকুর মেয়ে রুমা । এই সবে অঙ্কে মাস্টার্স কম্‌প্লিট করেছে । দীপক আর রুমার বিয়ের ব্যাপারে উভয় পরিবারের মত থাকলেও দীপক সহেলী নামে একটি মেয়েকে ভালোবাসে । সেই ভালোবাসাতেও দুই পরিবারের কোনো আপত্তি ছিল না । কিন্তু তখন মানে এখন থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে শিক্ষিত বেকার দীপকের পক্ষে সহেলীকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না । ও কয়েকবছর সময় চেয়েছিল । কিন্তু সহেলীর বাবা অন্য পাত্র দেখা শুরু করে দেন । এদিকে সহেলী দীপক ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে রাজী নয় । সহেলীর বাবা এতে ভীষণ চটে গিয়ে ওকে কলকাতায় দাদার বাড়িতে রেখে আসেন । তারপর পাঁচ বছর কেটে গেলেও ওদের আর দেখা হয়নি । গতকাল রুমা দীপকদের বাড়িতে এসেছে । আজ বিকালে রুমা দীপককে বেড়াতে নিয়ে যাবার জন্য বায়না ধরেছিল । একটু এদিক ওদিক ঘুরিয়ে এই রেস্টুরেন্টে উঠেছে ওরা । প্রায় আধঘণ্টা কেটে গেছে । বিল মিটিয়ে সামনে গেটের দিকে চোখ পড়তেই চমকে গেল দীপক । যদিও পেছন থেকে দেখল , তবু তার মনে হল এইমাত্র যে মেয়েটি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল সেটা আর কেউ নয় , সহেলী । রুমাকে ওখানে দাঁড়াতে বলে বাইরে গেল দীপক । কিন্তু সহেলীকে আর দেখতে পেল না । রেস্টুরেন্টে ফিরে আসতেই ওয়েটার একটা চিরকুট দীপকের হাতে দিয়ে বলল— “ এক মহিলা এটা আপনাকে দিতে বলে বেরিয়ে গেলেন , দীপক দেখল সহেলীর হাতের লেখা । ওতে লেখা— “ কলকাতায় থাকলেও তোমার সব খবরই পাই আমি । আমি এও জানি যে তুমিও আমায় খুব ভালোবাসো । তোমায় আমি কতটা ভালোবাসতে পেরেছি জানি না । কিন্তু বুঝেছি রুমা তোমায় খুব ভালোবাসে । ওর হাত ছেড়ো না । আমার এ দেহে প্রাণ থাকতে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বরণ করতে পারব না । যদি নতুন কোনো জন্ম থাকে , সেখানে তোমার থেকে আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না । যদি কোনো ভুল করি ক্ষমা করে দিও । আর তোমরা খুব খুব ভালো থেকো ।


লেখক পরিচিতি


তুষার সাঁতরার জন্ম ১৯৮৯ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল থানার অন্তর্গত লক্ষ্মণপুর গ্রামে । পিতা শ্রী নীলমাধব সাঁতরা এবং মাতা নমিতা দেবীর প্রথম সন্তান তুষার । পরিবারের বাকী সদস্য বলতে ভাই তুহিন এবং সহধর্মিনী পায়েল । প্রাথমিক পাঠ শেষ করেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । উচ্চ - মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন পাশের গ্রামের ইড়পালা হাইস্কুলে । হুগলী জেলার আরামবাগের নেতাজী মহাবিদ্যালয় থেকে গণিত বিষয়ে অনার্স শেষ করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এস.সি পাশ করেন ২০১২ সালে । ২০১৩ সালে হুগলী জেলার গুড়াপ থেকে বি.এড করেন । পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে চাকরীর ভ্যাকেন্সীতে শিক্ষকতা করেন । এরপর ২০১৭ সালে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী বর্ধমান জেলার প্রস্তুতির পাশাপাশি তিনটি স্কুলে ডেপুটেশনটিকেই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন । দু বছর শিক্ষকতা মাধবডিহি থানার অন্তর্গত নসীপুর প্রাথমিক করার পর এস . এস . সি পাশ করে ২০১৯ সালের ২৪ শে জানুয়ারী পাশের গ্রামে খাসবাড় হাইস্কুলে গণিতের সহশিক্ষক পদে যুক্ত হয়ে বর্তমানে কর্মরত আছেন ।

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

Mansuka Khabar

Mansuka khabar
Mansuka khabar