অঞ্জন কুমার মাইতি, মনসুকা:- মনসুকার ঝুমি নদীর দুই তীরে গজিয়ে উঠছে অসংখ্য লটারির দোকান। আমরা জানি সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে লটারির টিকিট কেটে বড়ো অঙ্কের টাকা পাওয়া যায় । তাই অনেকেই লটারির টিকিট কাটেন। বড়ো অঙ্কের টাকা পাওয়ার আশায় । অনেকেই আবার প্রথম প্রাইজ পাওয়ার জন্য ভগবানের পুজো করেন। প্রার্থনা করে থাকেন। নিজের ভাগ্য যাচাই করতে থাকেন।
কত জনের উপর ভগবান প্রসন্ন হবেন? কত জনের ভাগ্য উন্মোচন করবেন? মহাভারতে যুগেও পাণ্ডবদের বড়ো ভাই ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির তাঁর সম্পত্তি এবং ভাইদের সাথে তাঁদের স্ত্রী দ্রৌপদীকেও পাশা খেলায় বাজি রেখে কৌরবদের কাছে হেরে যান। পাণ্ডবরা সত্যবাদী ধার্মিক হওয়ার পরেও ভগবান বা ভাগ্য কেউ তাদের উপর প্রসন্নতা দেখায়নি। লটারিতে যে কারুর ভাগ্য খোলে না তা কিন্তু নয় যেটা খোলে সেটা মাত্র গুটি কয়েক লোকের কিন্তু হাজার হাজার টাকা মানুষ এই লটারির টিকিট কাটার নেশায় খুইয়েছেন।
লটারির আর পাশা খেলা এক না হলেও নেশাটা কিন্তু এক। পরিনাম কি ঘটে সেটা তো মহাভারতে ঘটতে দেখেছি দূর্যোধনের ছোটো ভাই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের চেষ্টা করেছিলেন - এ ঘটনা আমাদের কারোরই অজানা নয়। এই নেশায় সম্পদের সাথে মান মর্যাদাও খুইয়ে যেতে পারে।
কারা কাটেন টিকিট? একেবারে খেটেখাওয়া দিনমজুর মানুষদের বেশি টিকিট কাটতে দেখা যায়। তারা হঠাৎ করে নিজের ভাগ্য ফেরাতে চান? এবং আরো এক ধরনের মানুষদের টিকিট কাটতে দেখা যায় যাদের না পরিশ্রম করে বড়ো হওয়ার স্বপ্ন থাকে।
এখানে কোটি কোটি মানুষ টিকিট কাটেন তার মধ্যে গুটি কয়েক জনের ভাগ্য ফিরে কিন্তু কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য ফিরে না, তাদের কষ্ট করে ইনকাম করা টাকা দিনের পর দিন খুইয়াতে থাকেন। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
হতাশা কাটানোর জন্য সুরা পান করতে থাকেন। লটারির টিকিট কাটা দূত্যক্রীড়া (জুয়াখেলা), আসবপান (সুরাপান), মতো সমাজের আরও একটি ব্যাধি । দিন দিন রাজ্য বাসির এই সর্বনাশা নেশার প্রতি আসক্তি জন্মাচ্ছে। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই তাহলে কিন্তু করোনার মতোই ব্যাধিটি দ্রুত সংক্রামিত হয়ে পড়বে, এবং এর প্রভাবে সমাজের একটা বড়ো অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই দোকান গুলি শহর থেকে শহরতলি ছাড়িয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে গ্রামেও। মনসুকার ঝুমি নদীর দুই তীরে টিকিটের দোকানগুলি ব্যাঙের ছাতার মত যেমন গজিয়ে উঠছে তেমনি ঝড়ের গতিতেও টিকিটও বিক্রি হচ্ছে।