শিক্ষা দপ্তরের নতুন নির্দেশ: ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে লাগাম, উঠছে নানা প্রশ্ন

মেদিনীপুর,২২ আগষ্ট,২০২৪: রাজ্য সরকারের স্কুল শিক্ষা দপ্তর থেকে একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, যেখানে স্পষ্টতই জানানো হয়েছে যে, শিক্ষা দপ্তরের অনুমোদিত কর্মসূচি ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের আর কোনও ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (DI) জেলার সমস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে এই নির্দেশ পাঠিয়েছেন। নির্দেশের বক্তব্যে বলা হয়েছে, “শিক্ষা দপ্তরের কর্মসূচি ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।” এই নির্দেশের পিছনে যে রাজ্য সরকারের বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।


বেশ কিছুদিন ধরে RG Kar মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ছাত্রছাত্রীদের রাস্তার আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ছাত্রছাত্রীরা এই আন্দোলনে শামিল হয়, যা রাজ্য সরকারের কাছে এক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন নির্দেশিকা RG Kar ইস্যুতে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন বন্ধ করার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে হয়তো আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ছাত্রছাত্রীদের এ ধরনের আন্দোলন ভবিষ্যতে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর প্রতিবাদের রূপ নিতে পারে। সেই কারণেই এমন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

নতুন নির্দেশিকাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শিক্ষা মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নির্দেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “শিক্ষা দপ্তরের কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনও অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।” এখান থেকেই নানা সংশয় তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ট্যালেন্ট সার্চ পরীক্ষা, মেধা অন্বেষণ বা বিভিন্ন সংস্থার আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কি ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিতে পারবে? তাছাড়া, খেলাধুলার ক্ষেত্রেও কি এই বিধি প্রযোজ্য হবে? এমনকি, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযান, সেভ ড্রাইভ সেভ লাইফ অভিযান, দুয়ারে সরকার—এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মসূচিগুলিতেও ছাত্রছাত্রীরা কি অংশগ্রহণ করতে পারবে না? 

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার যদি এই নির্দেশিকা প্রয়োগ করে তবে তা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক শৈশব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমান সময়ে শিক্ষার বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য নানা কর্মসূচি ও প্রতিযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নতুন নির্দেশিকার ফলে সে সমস্ত ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণে বাধা আসতে পারে। 

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষাবিদ মনে করছেন, সরকারের এমন কড়া নির্দেশিকা আসলে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা তাদের শিক্ষাজীবন এবং ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলেছে। তাই সরকার চাইছে ছাত্রছাত্রীরা শুধুমাত্র শিক্ষার আওতায় থাকা কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ থাকুক। তবে শিক্ষাবিদদের একাংশ এই নির্দেশিকার কড়াকড়ি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা দাবি করেছেন।


বর্তমানে এই নির্দেশিকা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে শিক্ষা মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবকরাও এই বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কেবলমাত্র স্কুল শিক্ষা দপ্তরের আওতাধীন কার্যক্রম ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা যদি অন্য কোনও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে না পারে, তবে তাদের শিক্ষাজীবনের বাইরে অভিজ্ঞতা এবং বিকাশের সুযোগ কীভাবে নিশ্চিত হবে?

শিক্ষাবিদদের মতে, সরকারের উচিত এই বিষয়ে দ্রুত একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া, যাতে ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন এবং তাদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে কোনও রকম বাধা না আসে। সরকারের তরফ থেকে যদি এই নির্দেশিকার কার্যকরী ব্যাখ্যা না দেওয়া হয়, তবে তা নিয়ে আগামী দিনে আরও বিতর্ক এবং প্রতিবাদ হতে পারে। 

শিক্ষা দপ্তরের এই নির্দেশিকার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব থাকার সম্ভাবনা নিয়েও অনেকে মন্তব্য করেছেন সোস্যাল মিডিয়ায়। 

পরিস্থিতি যাই হোক, এই নির্দেশিকা রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে এবং তার সমাধান কীভাবে হবে তা নিয়ে সকলেই তাকিয়ে আছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

Shyamal Kumar Rong

আমি মনসুকা খবরের সাংবাদিক। খবর, ভিডিও, তথ্য, গল্প পাঠাতে যোগাযোগ করুন। ফোন/হোয়াটসঅ্যাপ ৯৭৭৫৭৩২৫২৫.

নবীনতর পূর্বতন

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar

বিজ্ঞাপন

Mansuka khabar
Mansuka khabar