শ্যামল রং, ২৮ আগস্ট, ২০২৪: দীর্ঘ সাত বছরের জট কাটিয়ে, অবশেষে উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগের জন্য নতুন করে মেধাতালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে (এসএসসি) আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মেধাতালিকা প্রকাশ করতে এবং তার পরের চার সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সেলিং সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে ২০১৫ সাল থেকে বন্ধ থাকা উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকেই উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি নানা আইনি জটিলতায় আটকে ছিল। প্রথমে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়াটি শুরু হলেও, বিভিন্ন মামলার কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়ে যায়। ২০২০ সালে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর, ২০২৩ সালে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য প্যানেল প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে, তখন ডিভিশন বেঞ্চ জানায় যে, প্যানেল প্রকাশ করা যেতে পারে, কিন্তু কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারবে না স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)।
মামলাটি পরবর্তীতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন নতুন ডিভিশন বেঞ্চে যায়। গত ১৮ই জুলাই এই বেঞ্চে শুনানি শেষ হয় এবং ২৮ আগস্ট আদালত চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে। রায় অনুযায়ী, স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নতুন মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। তারপরের চার সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এই রায়ে সাত বছর ধরে চলা নিয়োগের জট অবশেষে কাটল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এই রায়ে উচ্চ প্রাথমিকে চাকরির অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে তারা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমনকি বেশ কিছু প্রার্থীর বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত সেই প্রার্থীদের জন্য স্বস্তির কারণ হয়েছে। যাঁরা আগের মেধাতালিকায় স্থান পেয়েও নিয়োগ পাননি, তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হল।
কলকাতা হাইকোর্টের রায় কার্যকর করতে এখন স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে দায়িত্ব এসে পড়েছে। কমিশনকে চার সপ্তাহের মধ্যে নতুন মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং তার পরের চার সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সেলিং সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এসএসসি-র সামনে কঠিন সময়সীমা রয়েছে। তাদের কাছে এটি বড়ো চ্যালেঞ্জ, কারণ তাদের মধ্যে সবকিছুই আইনি জটিলতা এবং সময়সীমার মধ্যে করতে হবে।
উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। তবে, বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে। এর পর ২০২০ সালে, আদালত এই প্রক্রিয়াটি বাতিল করে দেয়। পরে, ২০২৩ সালে পুনরায় প্যানেল প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হলেও নিয়োগের সুপারিশ করা নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে বহু প্রার্থী অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং মামলা উচ্চতর আদালতে স্থানান্তরিত হয়। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষে এই রায় ঘোষণা করা হয়।
এই রায়ের পর আইনজীবী মহলের নানা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, আদালতের এই রায় আইনের নিরপেক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। “এই রায়ের মাধ্যমে হাজার হাজার প্রার্থী তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। আমরা আশা করছি, এসএসসি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে," বলেন মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী। অন্যদিকে, এসএসসি-র পক্ষের আইনজীবী জানান, “আমরা আদালতের রায়ের পূর্ণ সমর্থন করছি এবং যত দ্রুত সম্ভব মেধাতালিকা প্রকাশ করতে উদ্যোগী হবো।”
হাইকোর্টের এই রায় প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একদিকে তারা উচ্চ প্রাথমিকে চাকরির সম্ভাবনা দেখে উৎসাহিত, অন্যদিকে কয়েক বছরের অপেক্ষা এবং হতাশার অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা সতর্কও। “আমরা অনেক দিন ধরে এই দিনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আদালতের এই রায় আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ,” বলেন এক প্রার্থী। তবে, কয়েকজন প্রার্থী মনে করছেন, "নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হলে, তারা আবারও হতাশায় পড়বেন।"
হাইকোর্টের রায়ের পর সকলের নজর এখন স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওপর। প্রার্থীরা আশা করছেন, এসএসসি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেধাতালিকা প্রকাশ এবং কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। এই রায়ের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা দূর হবে এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার সূচনা হবে।
এই রায় উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। শিক্ষকদের নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত কার্যকর করার জন্য সকলেই উদগ্রীব। এখন দেখার বিষয়, এসএসসি কতটা দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে এবং উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে কিনা।