শ্যামল রং, মনসুকা, ৪ সেপ্টেম্বর: মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধানসহশিক্ষক ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় গণপতি সামন্ত মহাশয় গতকাল বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিবেকানন্দ নার্সিং হোমে গতকাল রাতে ৯টা ৩৫ মিনিটে তিনি পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শিক্ষাক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
শিক্ষক গণপতি সামন্ত মহাশয় ১৯৩৭ সালের ১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহশিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর অসাধারণ মেধা, পাণ্ডিত্য ও শিক্ষকতার প্রতি নিবেদন তাঁকে বিদ্যালয়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ছাত্রছাত্রীদের কাছে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছিল।১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তাঁর দক্ষ প্রশাসনিক পরিচালনায় বিদ্যালয় শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও সংস্কৃতিতে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও পাঠদান পদ্ধতিতে আধুনিকতার ছোঁয়া এনে শিক্ষার্থীদের মনন ও মেধা বিকাশে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন তিনি।
১৯৯৭ সালে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসর গ্রহণের পরেও তিনি শিক্ষা ও সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার মনসুকার মানুষকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাবিদ হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের মননে, মেধায় ও চরিত্র গঠনে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও গভীর জ্ঞান চিরকাল শিক্ষার্থীদের মনে আলোকিত স্থান করে নিয়েছে। বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েও সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার প্রসার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ছিলেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষক গণপতি সামন্ত মহাশয় বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তাঁর সামাজিক কাজের ফলে মনসুকা এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ে। তিনি এলাকার অসংখ্য দুঃস্থ ও পিছিয়ে পড়া পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষা ও সচেতনতার প্রসারে নিরলস পরিশ্রম করেন। ব্যক্তিগত জীবনে শিক্ষক গণপতি সামন্ত মহাশয় দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী, শ্রীমতী তপতী সামন্ত মহাশয়া, মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তবে, গণপতি সামন্ত মহাশয়ের আগেই তিনি পরলোক গমন করেন। এই দম্পতির শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান মনসুকার মানুষ চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন।
শিক্ষক গণপতি সামন্ত মহাশয়ের মৃত্যুতে মনসুকা তথা এলাকার শিক্ষাঙ্গনে ও সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শ্রী জয়ন্ত কুমার পাল মহাশয় জানান, "শিক্ষক গণপতি সামন্ত মহাশয়ের অবদান আমাদের কাছে চিরস্মরণীয়। তাঁর নেতৃত্বে বিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মানে এক নতুন মাত্রা পেয়েছিল। আজ তাঁকে হারিয়ে আমরা এক অভিভাবককে হারালাম।"
আজকের এই শোকাবহ দিনে মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছিলো।
বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক, প্রাক্তন ছাত্র, অভিভাবকরা উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ও মনসুকা অরুণোদয় সংঘের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সংঘের সদস্যবৃন্দ। গ্রামবাসী বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাক্তন ছাত্ররা তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন এবং তাঁর দেখানো পথে চলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।শিক্ষক গণপতি সামন্ত মহাশয়ের অবদান ছিল কেবলমাত্র শিক্ষকতার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি ছিলেন একজন মানবদরদী সমাজসেবকও। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তিনি সমাজকে সুন্দর করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তাঁর প্রয়াণে শোকাহত মনসুকার মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরকাল স্মরণ করবেন। ৪ঠা সেপ্টেম্বর বিকালে বাসভবনের নিকট খড়কপুর শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে। (Edited)