শ্যামল রং, মনসুকা, ৬ সেপ্টেম্বর: গতকাল ৫ই সেপ্টেম্বর ঘাটালের দীর্ঘগ্রাম শীতলানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দার্শনিক ডঃসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের জন্মদিন পালন তথা শিক্ষক দিবস উদযাপন ও বিদ্যালয়ে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন ও উন্মোচন উপলক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঘাটাল মহকুমা শাসক (এসডিও) সুমন বিশ্বাস মহাশয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূর্তিটি উন্মোচন করেন। বিদ্যাসাগরের মূর্তির উন্মোচন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে ওঠে। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বিদ্যাসাগরের মূর্তিটি উন্মোচন শেষে,বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক মধুসূদন কারক মহাশয় বলেন, “বিদ্যাসাগরের শিক্ষাদর্শন আমাদের মনে রাখতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তার শিক্ষা ও সংস্কারের কথা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বর্ষীয়ান শিক্ষক বগলাচরণ চক্রবর্তী মহাশয়, যিনি বিদ্যাসাগরের জীবনী ও তার শিক্ষার ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “বিদ্যাসাগরের মূর্তি এই বিদ্যালয়ে স্থাপিত হওয়া আমাদের জন্য এক বিশাল সম্মানের বিষয়। তার আদর্শের আলো আমাদের শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে পরিচালিত করবে।” বগলাচরণ চক্রবর্তীর মহাশয়ের বক্তব্য অনুষ্ঠানের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সনৎ কুমার রায় এবং প্রাক্তন শিক্ষিকা মৃদু শ্রী মিশ্র, অপর্ণা মন্ডল এবং প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার মাল মহাশয় /মহাশয়াগন যাঁরা সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ও বিদ্যাসাগরের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাঁদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে।
শিক্ষাবন্ধু জীতেন্দ্রনাথ আদক মহাশয় তাঁর বক্তব্যে বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারমূলক কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বিদ্যাসাগরের শিক্ষা ও সংস্কারের মেলবন্ধন আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা সমাজে পরিবর্তন আনতে পারি।”
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক শ্যামল কুমার চক্রবর্তী মহাশয় বিদ্যাসাগরের আদর্শ ও শিক্ষাদর্শন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অর্ধেন্দু বাবু বিদ্যালয়ের সমস্ত পঠন পাঠনে দিকে নজর রেখেছেন। তিনি ১০:৪৫ এ আসেন এবং চারটায় বাড়ি ফিরে যান। তিনি এতগুলো ছাত্রছাত্রীকে পাঠ দান করেন এবং যথাযথভাবে লক্ষ্য নজরে রাখেন। অর্ধেন্দু বাবুর নিরলস কর্মনিষ্ঠ শিক্ষকতার বহুল প্রশংসা করেছেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দূরদর্শন খ্যাত অঞ্জনা চক্রবর্তীর গানের পরিবেশনা। তিনি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক শ্যামল কুমার চক্রবর্তীর লেখা গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। তার সঙ্গতে ছিলেন অংশুমান চক্রবর্তী, যার সুরের মূর্ছনায় গানগুলো আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অঞ্জনা চক্রবর্তীর কণ্ঠে বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা আরও গভীর হয়ে ওঠে, যা অনুষ্ঠানকে এক আবেগঘন পরিবেশে রূপান্তরিত করে। ছাত্র-ছাত্রীরা গান আবৃত্তি কবিতা এবং যোগব্যায়াম প্রদর্শন করে। বিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বর্ণপরিচয় প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্ধেন্দু পাল। তিনি বলেন, “বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে আমরা তার আদর্শকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দিতে পারব। তার শিক্ষা ও মূল্যবোধ তাদের জীবনে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সোমা পণ্ডিত মহাশয়া, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ পুতুল চৌধুরী মহাশয়া, এবং আইসিডিএস কর্মী মায়া চক্রবর্তী মহাশয়া, বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির সদস্যা অসীমা মাইতি মহাশয়া। বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে বাণেশ্বর পাখিরা মহাশয়ের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে। অনুষ্ঠানের শেষে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যাসাগরের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করে এবং তার শিক্ষাদর্শন থেকে কীভাবে জীবনে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে বক্তব্য রাখে। তারা বিদ্যাসাগরের আদর্শ অনুসরণ করে ভবিষ্যতে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করে।
শীতলানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ বিদ্যাসাগরের আদর্শকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিদ্যালয়ে স্থাপিত এই মূর্তি শিক্ষার্থীদের মনে বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে বিরাজ করবে এবং তাদের সঠিক পথে চলার পথপ্রদর্শক হবে।