নিউজ ডেক্স, ১৯ জানুয়ারী : মহাকুম্ভ মেলার পবিত্র পরিবেশ এবার এক নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল সুন্দরী সন্ন্যাসী হর্ষ রিচারিয়ার বিদায়ের ঘটনাকে ঘিরে। গত কয়েকদিন ধরে এই ঘটনায় সাধারণ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি সাধু-সন্তদের মধ্যেও জল্পনা ছড়িয়েছে। হর্ষ যখন কুম্ভ ছেড়ে চলে গেলেন, তার ঠাকুমার আবেগঘন বক্তব্য এবং সাধুদের ভূমিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
হর্ষ রিচারিয়ার ঠাকুমার মতে, ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল হর্ষের। ১৯৯৫ সাল থেকে যে কুম্ভমেলাই অনুষ্ঠিত হোক না কেন, তিনি সেখানে উপস্থিত থেকেছেন। ঠাকুমার কথায়, ‘আমার নাতনি ছোট থেকেই আধ্যাত্মিক পরিবেশ ভালোবাসে। ও কুম্ভমেলার পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে নিজেকে শান্তি দিতে চায়। কিন্তু এবার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক।’
কুম্ভমেলায় হর্ষ রিচারিয়ার উপস্থিতি নিয়ে শুরু থেকেই কিছু সাধু অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, তার জীবনধারা এবং আচরণ সন্ন্যাসীর আদর্শের সঙ্গে মানানসই নয়। তবে হর্ষের পরিবার এবং ভক্তদের দাবি, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং হর্ষের আধ্যাত্মিক জীবন সম্পর্কে কোনো সঠিক ধারণা ছাড়াই এমন মন্তব্য করা হচ্ছে।
ঠাকুমা সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু সাধু আমার নাতনিকে কাঁদিয়েছেন। ও সেসব সহ্য করতে পারেনি। ঈশ্বর সব দেখছেন। যারা এমন করেছেন, তাদের তিনি শাস্তি দেবেন।’
মহাকুম্ভের পবিত্র পরিবেশ থেকে হর্ষ রিচারিয়ার আকস্মিক বিদায় অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। তিনি রথে চড়ে মেলায় প্রবেশ করেছিলেন এবং ভক্তরা তাকে দেখতে ভিড় করেছিলেন। তবে, পরিস্থিতি বদলে যায় যখন তার উপস্থিতি নিয়ে কিছু সাধু ও সাধারণ মানুষের সমালোচনা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি কুম্ভ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
হর্ষ রিচারিয়ার বিদায়ের ঘটনা আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। তার ভক্তদের মতে, একজন সন্ন্যাসীর আধ্যাত্মিকতা তার বাহ্যিক জীবনযাপন দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। অন্যদিকে, কিছু সাধু মনে করেন, মেলায় অংশগ্রহণকারীদের পোশাক ও আচরণে আধ্যাত্মিক পরিবেশ রক্ষা করা প্রয়োজন।
হর্ষের বিদায় কেবল কুম্ভমেলার আলোচনার বিষয় নয়, বরং সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে নানা মতামত দেখা গিয়েছে। অনেকেই তার পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছেন, 'সুন্দরী হওয়া কি অপরাধ?' আবার কেউ কেউ বলেছেন, ‘সন্ন্যাসীদের আচার-আচরণে সংযম থাকা উচিত। তবে কাউকে কষ্ট দেওয়া আধ্যাত্মিকতার পরিপন্থী।’
এই ঘটনা মহাকুম্ভমেলার পবিত্র পরিবেশে এক দাগ ফেলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠছে, আধ্যাত্মিক পরিবেশে নারীর অবস্থান নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা ইতিবাচক। একজন সন্ন্যাসী হিসেবে হর্ষের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে অনেকেই বলছেন, 'আধ্যাত্মিকতার মঞ্চে ব্যক্তিগত চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়া উচিত।’