কলকাতা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫: ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির (আপার প্রাইমারি) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামী ১৬ মে’র মধ্যে সম্পন্ন করতে কলকাতা হাইকোর্ট কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে মেধাতালিকায় থাকা সমস্ত যোগ্য প্রার্থীকে চাকরি প্রদান করতে হবে। অন্যথায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনকে আদালত অবমাননার অভিযোগে মুখোমুখি হতে হবে। এই রায় দীর্ঘ নয় বছর ধরে ঝুলে থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আশার আলো জাগিয়েছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় ১৪,৫২০টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ছিল। প্রায় ২৩ লাখ প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ওএমআর শিট মূল্যায়ন, নিয়োগ তালিকায় অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতির অভিযোগে প্রক্রিয়াটি একাধিকবার আইনি জটিলতায় আটকে যায়। ২০২০ সালে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দেন। ২০২১ সালে নথি যাচাই ও ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশিত হলেও, প্রক্রিয়া পুরোপুরি এগোয়নি।
গত বছর, নভেম্বরে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শেষ হয়। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে এসএসসি মেধাতালিকা প্রস্তুত করে। ২০২৪ সালের আগস্টে বিচারপতি চক্রবর্তীর বেঞ্চ ১,৪৬৩ জন প্রার্থীকে মেধাতালিকায় যুক্ত করার নির্দেশ দেয়, যাঁদের ওএমআর শিট মূল্যায়নের ভিত্তিতে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আদালত জানায়, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় নতুন করে মূল্যায়ন সম্ভব নয়। ফলে, ১৪,৫২০ জনের মেধাতালিকা চূড়ান্ত করতে বলা হয়।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে এসএসসিকে এখন তৎপর হতে হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সেলিং সম্পন্ন করে সুপারিশপত্র বিলি করতে হবে। এর মধ্যে যোগ্য প্রার্থীদের স্কুলে যোগদান নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায়, আদালত অবমাননার মামলায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
এই রায়ে আন্দোলনরত প্রার্থীরা আশাবাদী। দীর্ঘদিন ধরে চাকরির জন্য অপেক্ষারত অনেকে বলছেন, এবার হয়তো তাঁদের স্বপ্ন পূরণ হবে। তবে, এত বড় নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা এসএসসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তবু, আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ এগোচ্ছে।
শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার দাবি দীর্ঘদিনের। এই রায়ের মাধ্যমে আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, সময়সীমা মেনে কাজ শেষ না হলে নতুন আইনি সংকট তৈরি হতে পারে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বার্থে এই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া এখন অত্যন্ত জরুরি।