শ্যামল রং, ঘাটাল: রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে তৎপর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, এবং পূর্ব মেদিনীপুরসহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা জলমগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের কষ্ট দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, এই বছর কোনো রকম আলোচনা ছাড়া প্রায় পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, যার জন্য এই বিপর্যয়। তিনি একে ‘ম্যান ম্যাড বন্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পোস্টে আরও জানিয়েছেন, “বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের বিপদে আমি তাঁদের পাশে আছি। কাল আমি হুগলির পুরশুড়া, গোঘাট-আরামবাগ এলাকা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে গিয়েছিলাম। এছাড়াও বীরভূমের বন্যা কবলিত এলাকায় প্রশাসনের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখেছি। আজ, পাঁশকুড়া, রাতুলিয়ার বন্যা কবলিত এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখলাম এবং সেখানকার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করলাম।”
বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত, যাঁদের শস্যের ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের শস্য বীমার টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, “আমাদের প্রশাসন দিবারাত্রি তাঁদের পাশে আছে। ত্রাণ পরিষেবায় চালু আছে। প্রত্যেক পরিবার যেন ত্রাণ পরিষেবা পায়, তা সুনিশ্চিত করেছি। কোনো একজন মানুষেরও ক্ষতি যেন না হয় সেটি নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।”
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছেন, “এই বছর কোনো আলোচনা ব্যতীত প্রায় পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, যার জন্য দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটি একটি ‘ম্যান ম্যাড বন্যা’ ছাড়া আর কিছুই নয়।” এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, এত বড়ো পরিমাণে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত কে বা কারা নিয়েছে এবং কেন কোনো আলোচনা করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর জলস্তর বাড়লে বন্যার সম্ভাবনা থাকে। তবে জল ছাড়ার ক্ষেত্রে যদি যথাযথ সমন্বয় না থাকে, তাহলে বন্যার তীব্রতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এই ‘ম্যান ম্যাড বন্যা’ অভিযোগ যে যথেষ্ট গুরুতর, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষত, রাজ্যের শস্যক্ষেত্রগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা কৃষকদের জন্য এক বড়ো ধাক্কা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “যাঁদের শস্যের ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা শস্য বীমার টাকা পাবেন।” তবে, এই ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে, কেবল বীমার টাকায় সবটা পূরণ সম্ভব হবে কিনা, সেই নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগে জনসাধারণের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। বন্যার ফলে যেসব মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, যাঁদের ফসল তছনছ হয়ে গেছে, তাঁদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস। তিনি পোস্টে জানিয়েছেন, “আমি প্রথমদিন থেকে এই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। দুর্গতদের পাশে থাকতে আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এই মুহূর্তে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের প্রধান চাহিদা ত্রাণ ও পুনর্বাসন। পানীয় জল, খাবার, চিকিৎসা পরিষেবা— এসবের ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুত। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “ত্রাণ পরিষেবায় চালু আছে। প্রত্যেক পরিবার যেন ত্রাণ পরিষেবা পায়, তা সুনিশ্চিত করেছি।” তবে, বাস্তব পরিস্থিতিতে কতটা দ্রুত ও কার্যকরভাবে এই ত্রাণ পরিষেবা পৌঁছানো যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। এমনকি, এলাকাভিত্তিক বন্যার তীব্রতা ও ক্ষতির মাত্রা অনুযায়ী ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের সঠিক পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, সেটিও দেখার বিষয়।
বন্যার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তা-ঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, ঘরবাড়ি জলমগ্ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, এমনকি চিকিৎসা পরিষেবাও বাধাগ্রস্ত। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় পানীয় জলের সংকটও তীব্রতর হয়েছে।
রাজ্যের এই কঠিন পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সমস্যাগুলি সরাসরি শুনে, এবং তাঁদের আশ্বস্ত করে প্রশাসনিক স্তরে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার এই প্রয়াস প্রশংসিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাশে আছেন এবং তাঁদের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সক্রিয় রয়েছেন।